রাস্তায় ভিক্ষে করে কেমব্রিজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র
ডেস্ক রিপোর্ট: ‘ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়’, একথাটা বোধহয় নিছক প্রবাদবাক্য নয়। আর সেটাই প্রমাণ করে দিলেন ভারেতর চেন্নাইয়ের যুবক জয়ভেল। শত বাধার মধ্যেও পড়াশোনাটাকেই সবার আগে রেখেছিলেন তিনি। এমনকি রাস্তায় ভিক্ষা করতে হলেও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। আর তাই আজ সবাইকে তাক লাগিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে নিয়েছেন এই যুবক।
ফুটপাতে ভিক্ষে করা দিয়ে জীবন শুরু। এখন কেমব্রিজের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সে। চাষের ক্ষতি সামলাতে না পেরে অন্ধ্রের নেল্লোর থেকে চেন্নাইয়ে চলে আসে জয়ভেলের পরিবার। ফুটপাতে মায়ের সঙ্গে ভিক্ষে করে জীবন কাটতে থাকে জয়ভেলের। সকালে উঠে ভিক্ষে করা। রাত হলে ওই ফুটপাতেই কোনোরকমে শুয়ে পড়ে ঘুমানো। তার ওপরে ছিল জয়ভেলের মায়ের মদের নেশা।
কিন্তু, জীবন বদলে যায় ১৯৯৮ সালে। জয়ভেলের মায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় উমা মুথুরামন ও তার স্বামীর। এরা দুজনে শ্যাম চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। এদের কাজ ছিল পথশিশুদের নিয়ে। পথশিশুদের ওপরে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে জয়ভেলের মায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় উমার। উমা ও তার স্বামী জয়ভেলকে তাদের কাছে দিতে অনুরোধ করেন। প্রথমে রেগে গেলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান জয়ভেলের মা। উমা জয়ভেলকে ভর্তি করেন স্কুলে। সেই শুরু। প্রথম প্রথম নাকি পড়াশোনা ভালো লাগতো না। পরে মন বসে যায় বলে জানিয়েছেন জয়ভেল। এভাবেই কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির সিলেবাস অনুযায়ী দশম শ্রেণির পরীক্ষা পাস করে জয়ভেল। সুযোগ পেয়ে যান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার এনহান্সমেন্ট টেকনোলজি পাঠক্রমে। তিনটি দেশে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন জয়ভেল। কিন্তু বেছে নেন ব্রিটেনকেই। ইতোমধ্যেই কেমব্রিজের ২ বছরের পাঠক্রম শেষ করে ফেলেছেন জয়ভেল। এর পর সুযোগ পেয়েছেন তুরিন ইউনিভার্সিটিতে।
তবে দুঃখের বিষয় হল এটাই যে, সরকারের কোনও সাহায্য পাননি শ্যাম চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ওই দম্পতি। লন্ডনে পড়াশোনার জন্য জয়ভেলকে ১৭ লক্ষ টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন তারা। এবার ইতালিতে যাওয়ার জন্য জোগাড় করতে শুরু করতে চলেছেন ৮ লক্ষ টাকা। তাই ভারতে এসে পড়াশোনা শেষ করতে চান জয়ভেল। তারপর চাকরি পেয়ে মুথুরামন দম্পতির সব ঋণ মেটাবেন তিনি। এমনটাই ইচ্ছা জয়ভেলের।