পদ্মায় ডুবে নিজের মৃত্যুর পরও মা ভাসিয়ে রাখলেন শিশুপুত্রকে
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ভরা পদ্মায় নৌকাডুবির পরও শিশুর আশ্চর্য রক্ষায় বিস্মিত নানা মহল। নিজে ডুবে গেলেন মা। কিন্তু ডুবতে দিলেন না তিন বছরের ছেলেকে। ভরা পদ্মায় মায়ের আধডোবা মৃতদেহের উপর ভেসে বেঁচে রইল শিশু। মর্মান্তিক এ নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়াতে। কিন্তু দুর্ঘটনার পর শিশুটি যে রকম আশ্চর্যজনক রক্ষা পেয়েছে, তাতে হতবাক অনেকেই।
শনিবার সন্ধ্যার কিছু আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার মোহনায় শিশুটিকে জলে ভাসতে দেখেন একটি নৌকার যাত্রীরা। তারা জানিয়েছেন, শিশুটিকে জলে ভাসতে দেখে বেশ অস্বাভাবিকই লেগেছিল। কারণ শিশুটিকে দেখে বোঝা গিয়েছিল সে জীবিত। কিন্তু তিন বছরের শিশুর পক্ষে জীবিত অবস্থায় পদ্মায় ভেসে থাকা কী করে সম্ভব, তা প্রথমে বোঝা যায়নি। শিশুটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে তারা দেখতে পান। এক মহিলার দেহ জলের উপরের স্তরের ঠিক নিচে ভাসছে এবং তার উপরেই শিশুটি রয়েছে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করা হয়। মহিলার আধডোবা দেহও পাড়ে আনা হয়। তবে সে দেহে তখন আর প্রাণ ছিল না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ মহীয়সী মায়ের নাম তানজিলা (২৬)। তিনি লালপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী জামিল হোসেনের স্ত্রী। আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিনি শিশুপুত্রকে নিয়ে নৌকায় চড়ে লালপুর ফিরছিলেন। মাঝ নদীতে নৌকার তলা ফেটে গিয়ে তা পদ্মায় ডুবে যায়। নৌকার মাঝি সাঁতরে পাড়ে ফেরেন। কিন্তু তানজিলা তা পারেননি। তিনি ডুবে যান।
নিজে ডুবে গিয়েও তানজিলা কীভাবে তার শিশুপুত্রকে ভাসিয়ে রাখলেন, তা নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ডুবন্ত অবস্থাতেও কিছুক্ষণ হয়তো শিশুপুত্রকে ভাসিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু মৃত্যুর পরও কীভাবে তানজিলা ছেলেকে ডুবতে দিলেন না, তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। জলে ডুবে মৃত্যু হলে তাৎক্ষণিকভাবে দেহ ভেসে ওঠে না। অনেক পরে দেহ ফুলে উঠলে তা উপরের দিকে ভেসে ওঠে। কিন্তু তানজিলার ক্ষেত্রে তা হয়নি। তার মৃতদেহ ভাসমান ছিল এবং তার উপরেই শিশুটি খেলছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক কবিরাজ জানিয়েছেন, শিশুটি সুস্থ রয়েছে। তানজিলার দেহ আবেদের ঘাট এলাকায় রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ভেড়ামারা শাখার পুলিশ কর্মকর্তা মোজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, দৌলতপুরে নৌকাডুবির ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ হয়েছেন কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্পাদনা: প্রিয়াংকা