রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশ হবে ওয়েবসাইটে : অর্থমন্ত্রী
হাসান আরিফ : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, রিজার্ভ চুরি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী ২২ তারিখ বৃহস্পতিবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। আর এই বিষয়ে যা বলার বাংলাদেশ ব্যাংকই বলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর আমি দেশের বাইরে যাব। তার আগেই ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ৩০ মে হাতে পাওয়ার পর তা ‘পড়ে দেখে’ প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন মুহিত। এরপর ওই প্রতিবেদন প্রকাশে আরও কয়েক দফা সময় দিলেও তিনি কথা রাখতে পারেননি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা চুরি হওয়ার পর ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে।
বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্র্বতীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেওয়া হয় পুরো প্রতিবেদন।
এরমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক দফা সময় দেওয়ার পরও ওই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশিত না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চায়।
রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির তদন্তের মধ্যে কিম অং নামের এক ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স সরকারের হাতে ফেরত দেন। ওই টাকা দেশটির এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলে জমা হওয়ার পর বাংলাদেশকে তা ফেরত দিতে আদালতে প্রক্রিয়া শুরু করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি অর্থ স্থানান্তরে ‘মুদ্রাপাচার’ আইন লঙ্ঘন হয়েছিল কী না- তা জানতে তদন্ত শেষ করেছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। শিগগিরই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে ফিলিপিন্সের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে তিন সপ্তাহের সফরে ২৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন অর্থমন্ত্রী। এই সফরে তিনি নেদারল্যান্ডস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন। সফর শেষে ১২ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম