প্রভাবিত করা সহজ বলে জঙ্গিদের টার্গেট কিশোররা
মাহমুদুল আলম : সাম্প্রতিক জঙ্গি ইস্যুতে নতুন আতঙ্কের বিষয়Ñ কিশোরদের জড়িয়ে পড়া। আইন সংশ্লিষ্টদের মতে, এই বয়সী শিশুদের বিবেচনা করার ক্ষমতা কম। সাধারণত কেউ সন্দেহও করে না। তাদেরকে প্রভাবিত করা সহজ, তাই জঙ্গিরা তাদের টার্গেট করছে।
রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছে ঢাকার আদালত। সর্বশেষ গতকালের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে আইন সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সিগমা হুদা এই প্রতিবেদককে বলেন, বয়সের একটা সময় থাকে যখন কিশোর না কি প্রাপ্তবয়স্ক ঠিক বোঝা যায় না। ওই সময় তাদের একটা ঝোঁক থাকে। সামনে বাধা এলে টপকানোর প্রবণতা থাকে। তাই তাদেরকে একপেশে বুঝিয়ে প্রভাবিত করা যায়। যাই হোক, এসব থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য মনস্তাত্বিক বিষয়ের উপর কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনে তাদের রিমান্ডে নেওয়া যায় না। তাই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে, যেন তাদের বিপথে নিতে না পারে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, পারিবারিকভাবে ও প্রাথমিক শিক্ষায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা না থাকায় তরুণ ও কিশোরদেরকে বিপথগামী করা সহজ হচ্ছে। পারিবারিকভাবে দেখাশোনা না করায় একটি সুবিধাবাদী মহল কোমলমতি এই সব তরুণদের ভয়াবহ অপরাধের দিকে টেনে নিচ্ছে। তাছাড়া এই বয়সীদের কেবল রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে নয়, সাধারণত মানুষ সন্দেহও করবে না। তাই তাদের দিয়ে যেকোনো অপরাধ করানো সহজ হবে মনে করে তাদেরকে টানছে ওই মহল।
ওই কিশোরের বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে রিমান্ডে নিয়ে যদি কোনো তথ্য আদায় করা যায়, তাহলে তাকে রিমান্ডে নেওয়া তো দোষের কিছু নয়। তাছাড়া রিমান্ডে নেওয়ার মানে হচ্ছে হেফাজতে নেয়া। কেবল আসামিকে নয়, প্রয়োজনে কোনো সাক্ষীকেও রিমান্ডে নেওয়া যায়। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার কথা আইনে কোথাও বলা নেই।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, কিশোররা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে, এটা ভীতিকর। কারণ তাদেরকে প্রভাবিত করা তুলনামূলক সহজ। এসব আইন যখন করা হয় তখন সাধারণ বিষয় বিবেচনা করে করা হয়েছে। তখন জঙ্গিবাদের প্রেক্ষাপট সামনে ছিল না। জঙ্গিবাদের বিষয়টি কোনো সাধারণ বিষয় নয়। তাই জঙ্গিদের বিষয় সাধারণভাবে না দেখাই উচিত।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী