গৃহহীন আমেরিকানদের জীবনযাপন শেষ
কিংজুন এরপর নেলসনের সহায়তায় আরও দশজনের ছবি তোলেন। তিনি নেলসন ও অপর লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় অনুবাদ সহায়ক সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। এছাড়া তাদের কথাবার্তাও রেকর্ড করেন তিনি। এরপর দেশে ফিরে বন্ধুদের কাছ থেকে ওগুলো অনুবাদ করে নেন।
মাইকেল টি অলিভার (৪৭) নামের আরেকজন বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আমার ঘরবাড়ি, চাকরি সবকিছু হারাই, এমন কি স্ত্রীকেও। এই মুহূর্তে রাস্তায় থাকা ছাড়া আমার কোনো গতি নেই। কোনো কোনো সময় সরকারের কাছ থেকে কিছু খাবার পেয়ে থাকি। কিন্তু অন্যকোনো সংস্থার কাছে সাহয্য চাইতে মোটেও রাজি নই আমি।’
এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে প্রয়োজন কী? এই প্রশ্ন করে নিজে নিজেই তার উত্তর দিলেন অলিভারÑ ‘আমি গাড়ি চালাতে জানি। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এক সময় গাড়ি চালাতামও। কিন্তু এখন আর চালাব না। এখন কি হবে, আমি জানি না, আমার সামনে খুব বেশি বিকল্পও নেই।’
জন রেয়েস (৫৭) বলেন, ‘আমি এভাবে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছি। একসময় আমি মেকানিক ছিলাম। একবার এক গাড়িচালক প্রচ- আঘাত করায় আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয় তিন মাস। এতে আমি স্মৃতিশক্তি অনেকটা হারিয়ে ফেলি এবং ব্রেনেরও অনেকটা ক্ষতি হয়।’ ‘আমি ২০ বছর হয় বিয়ে করেছি। কিন্তু হাসপাতাল ত্যাগ করার পর তাকে ঠিকমতো চিনতেও পারি না। আমার এই অবস্থার জন্য আমি সেই গাড়িচালককে অন্তর থেকে ঘৃণা করি।’
জোহান মার্শাল (৫০) নামের অপর একজন বলেন, ‘কোথায়ও আমি চাকরি পাচ্ছিলাম না। একজন বুড়ো সেলফোন ইঞ্জিনিয়ারকে কেউ চাকরি দিতে চায় না। এভাবে বেঁচে থাকাকেই বেছে নিয়েছি। কেননা আসলেও এটি আরামদায়ক। এখন আসলে সময়টা খুবই কঠিন, করার মতো কিছুই নেই। ‘আমি সরকার কিংবা কোনো সংস্থার কাছ থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করি না। মাঝে মধ্যে ল্যাপটপ বের করে বসে থাকি মাত্র। আসলে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি জেনারেটরের। তাবুটাকে যদি একটু গরম করা যেত তাহলে কি যে ভালো হতো।’
দুই ভাই ক্রিস্টো (২১) জ্যাকব (১৮)। তারা বলেন, ‘আমাদের আরও দুটি ভাই আছে। বয়সে খানিকটা ছোট, বসবাস করে বাবা-মার সঙ্গে। তবে চার বছর ধরে আমাদের কোনো বাড়িঘর নেই। এভাবে বসবাস করতে ভালো লাগে না। কিন্তু অন্য কোনো বিকল্পও নেই। এভাবে থাকতে থাকতে আমরা এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে আমরা মনে করি না যে, জীবন ধারণের এটি কোনো ভালো উপায়। আমাদের লক্ষ্য হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তায় বসবাস ত্যাগ করা।’
এদের মতো ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় বসবাসকারী আরও কয়েকজন হলেন, টিওন (২৩), লাইনেট (৪০), অ্যান বিকা (২৫), লাইহে (৩৭)। জীবনযাপনে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন তারা। তবে এ অবস্থা তাদের থাকবে না। নিজেদের বাড়িঘর হবে, কষ্টের দিন পেরিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনে ফিরতে পারবেন এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।
গ্রন্থনা: আশিক রহমান, সূত্র : ইন্টারনেট