পরাজিত হবে জঙ্গিবাদ, জয়ী হবে বাংলাদেশ
কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়ায় বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান। ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া ‘সাহেব বাড়ির’ পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামায়াতের আয়োজন করেন। সেদিনের জামায়াতে ১ লাখ ২৫ হাজার লোক জমায়েত হয়। তার ফলেই ওই জায়গার নাম হয় ‘সোয়া লাখি’। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। বর্তমানে শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে কমবেশি প্রায় তিন লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের জামায়াত আদায় করেন। কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঈদুল আজহার জামায়াতে মুসল্লির উপস্থিতিতি কিছুটা কম হয়। তবে এবারের কোরবানির ঈদের জামায়াত ছিল পুরোপুরিই শোলাকিয়ার ইতিহাসের ব্যতিক্রম। দৈনিক ইত্তেফাকসহ বেশকিছু সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম ছিল ঠিক এমনÑ ‘শোলাকিয়ার ঈদ জামায়াতে শ’খানেক মুসল্লি!’ আবার কিছু কিছু সংবাদমাধমের সংবাদে বলা হয়েছে, শোলাকিয়ার ঈদ জামায়াতে মুসল্লির চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিই ছিল বেশি!
এই কুরবানির ঈদের দিন থেকেই শোলাকিয়ার ঈদ জামায়াতে অল্পসংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে ফেসবুক ছিল সরগরম। নানাজনের ছিল নানান মত, অবশ্য আমি সেই মতের দিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না, আবার কারও কারও মতামতকে উপেক্ষাও করতে পারি না। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেছেন, ‘কুরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঈদুল আজহায় এমনিতে মুসল্লি কম হয়। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এবার আরও কম হয়েছে। আমার সঠিক জানা নেই, গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ এর ঈদুল আজাহায় শোলাকিয়ার ঈদের জামায়াতে কি পরিমাণ মুসল্লির সমাগম হয়েছিল। তবে তা যে লাখ পেরিয়েছিল তা আমি নিশ্চিত। গত বছরও কিন্তু ঈদুল আজহার দিন কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে, আর সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এসেই শোলাকিয়ার ঈদের জামায়াতে শরিক হয়েছেন। তাই কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের কথা আমি তেমনভাবে বিশ্বাস করতে পারছি না বা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। অনেকের মতে, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ গণজাগরণ মঞ্চে উঠেছিলেন এবং জাগরণ ওয়ালাদের পক্ষে বক্তৃতা করেছিলেন, এই জন্যই নাকি ঈদুল আজহার ঈদের জামায়াতে মুসল্লি কম হয়েছে। মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ তো বেশ কয়েক বছর যাবৎ-ই শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামায়াতের ইমামতি করে আসছেন, গণজাগরণ মঞ্চ তো ২০১৩ সালে গঠিত হয়েছিল। ২০১৩ সালের পর তো অনেকগুলো ঈদের জামায়াতই অনুষ্ঠিত হয়েছে শোলাকিয়ায়, সেসব জামায়াতেও তো দেশের নানাপ্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসল্লি এসে শরিক হয়েছিলেন। তাই যারা বলছেন, যে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ গণজাগরণ মঞ্চে উঠেছিলেন এবং জাগরণের পক্ষে বক্তৃতা করেছিলেনÑ এ কারণেই এবারের ঈদুল আজহার জামায়াতে মুসল্লিদের উপস্থিতি হ্রাস পেয়েছে। তাদের এমন বক্তব্য কতটা বাস্তব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এ বছরই ঈদুল ফিতরের জামায়াতের আগে বিপথগামীদের দ্বারা রক্তাত হয়েছে শোলাকিয়া। অনেকেরই ধারণা, সেদিনের জঙ্গি হামলার ভয়ে এবারও মুসল্লিরা আতংকিত। আর সেই আতংকের কারণেই দেশের নানাপ্রান্ত থেকে মুসল্লিরা এখানে আসতে ভয় পেয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নিñিদ্র নিরাপত্তা ছিল এবারের শোলাকিয়ার ঈদের জামায়াতেও। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছিল। তারপরও কেন এবারে ঈদুল আজহার জামায়াতে মুসল্লিদের উপস্থিতি এত কম? এমন প্রশ্ন এখন সমগ্র জাতির মনে।
শোলাকিয়া ময়দানের বিশাল ঈদের জামায়াত শুধু কিশোরগঞ্জকেই নয়, গৌরবান্বিত সমগ্র বাঙালি জাতি। শেষ পর্যন্ত তথাকথিত ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের কালোথাবা থেকে রক্ষা পায়নি শোলাকিয়ার ঈদগাহের ময়দান। পুলিশ, মুসলিম, হিন্দু সবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শোলাকিয়া। আজ হয়তো জঙ্গিদের ভয়ে জীবন রক্ষার ভয়ে অনেক মুসল্লি প্রবল ইচ্ছা সত্যেও শরিক হতে পারেননি শোলাকিয়ার ঈদুল আজহার ঈদ জামায়াতে, বিশ্বাস আগামী দিনে, আগামী ঈদের জামায়াতেই আগের রূপ ফিরে পাবে ঐতিহ্যের শোলাকিয়া। পরাজিত হবে জঙ্গিবাদ, জয়ী হবে বাংলাদেশই।
সম্পাদনা: আশিক রহমান