হয়তো শৈথিল্য ছিল, যার ফলে জঙ্গিরা প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান
বেশ কিছুদিন ধরেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এরই মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় দেড় দশকের মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটল। যেখানে ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন ও ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ভারতের উরিতে সেনা সদস্যের যে নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে, সেটা অত্যন্ত সুরক্ষিত ছিল। এর আগেও কয়েকবার জঙ্গিরা হামলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। এবার সেখানে হয়তো শৈথিল্য ছিল, যার ফলে জঙ্গিরা প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে, অপারেশন চালাতে সমর্থ হয়েছে। এটা একধরনের যুদ্ধ। হামলাকারী ৪ জনকেও ভারতীয় বাহিনী হত্যা করেছে। রাতভর ভারত কম্বিং অপারেশন চালিয়ে অনেক কাশ্মীরি নিরপরাধ মানুষকে ধরেছে এবং সকালে আবার ছেড়েও দিয়েছে।
ভারত সাধারণ মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাই বলে থাকেনÑ মানুষের ‘হৃদয় ও মন’ জয় করো ভালো কাজের মাধ্যমে। ভারতীয় বিশ্লেষকরাও এনডিটিভিকে বলেছেন, ভারত মানুষের হৃদয় ও মন জয় করতে সমর্থ হয়নি। এখানে রূঢ়িসহ অন্যান্য অঞ্চলের কাশ্মীরের মানুষ ভারতের সঙ্গে থাকতে চায় না। জোর করে জায়গা দখল করা, কম্বিং অপারেশন করা, গুলি করা, অনেকসময় গুলিতে যারা আহত বা মারা যায় তাদের পরিবারের প্রতি ভারতের কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব কখনোই কোনো সহমর্মিতা প্রকাশ করেনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আচরণেই দখলাদারীর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়।
ভারতীয়দের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে যাওয়া তাদের নিজেদেরই ব্যর্থতা ছিল। যদি এখনই তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনি জোরদার না করে তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও হামলা হতে পারে।
এ হামলা যদি পাকিস্তানিরাই করে থাকে তবে আমি বলব, ভারতীয় সেনাবাহিনীর চরম ব্যর্থতা। এত উন্নতমানের প্রযুক্তি ভারতের থাকতেও এর সঠিক কোনো ব্যবহার করতে না পারাটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। ইসরাইল থেকে ভারত যে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি পেয়েছে, তারপরেও তাদের এ ধরনের ব্যর্থতা দেখতে হয়। এরপরও পাকিস্তান এ ধরনের হামলা করে থাকে, তাহলে তো পাকিস্তানি বাহিনীই গর্বিত ও আনন্দিত হবে।
ভারতীয় কট্টরপন্থি অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, পাকিস্তানকে দমন করতে হলে এখন বল প্রয়োগ করতে হবে। আবার এমন অনেক বিশ্লেষকও রয়েছেন যারা বলছেন, পাকিস্তান এখন তার কাশ্মীর বর্ডারে স্বল্পমাত্রার আনবিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে। স্বল্পমাত্রার এই আনবিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০-৫০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি বলতে গেলে পাকিস্তানের হাতে বিশাল সংখ্যায়। শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পর পাকিস্তানই হলো তৃতীয় শক্তিধর রাষ্ট্র। বর্তমানে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পাকিস্তানের স্বল্পমাত্রার এসব ক্ষেপণাস্ত্র অনেক বেশি কার্যকর। ভারত কখনোই এ ধরনের ঝুঁকি নিবে না। সামান্যতম সামরিক আক্রমণ করলেই পাল্টা আঘাত মারাত্মক হয়ে থাকে। আর পাকিস্তানিরা এসব বিষয়ে খুবই স্পর্শকাতর। তারা কোনোভাবেই দায় স্বীকার করে না।
ভারত সরকার মনে করে, কাশ্মীর প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকার ভারতের যেকোনো কূটনৈতিক প্রয়াসে সমর্থন দেবে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে কোনো ধরনের প্রস্তাব তুলবেন বলে আমার মনে হয় না। কাশ্মীরের জনগণ যে সংগ্রাম সে ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করবেন বলেও আমার মনে হয় না। সুতরাং বোঝা যায়, বাংলাদেশ পুরো বিষয়টা থেকে নিজেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখতে চাইবে।
পরিচিতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: শরিফুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশিক রহমান