তরুণদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে
রাশেদা কে. চৌধুরী
এ সমাজের সব সন্তান উগ্রবাদী হয়ে যাচ্ছে, এমনটি ঢালাওভাবে বলা ঠিক হবে না। কিছুসংখ্যক সন্তানদের মধ্যে হয়তো আমরা একটা উগ্রবাদী প্রবণতা লক্ষ্য করছি, সবার মধ্যে নয়। আমি যেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, এটা শুধু উগ্রবাদ নয়, মাদকসেবনই এর মূল কারণ। উগ্রবাদও একধরনের মাদকাসক্তির মতো। তরুণদের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আগে দেখতে হবে, গলদটা কোথায়? তারপর বলা যেতে পারে, কেন তরুণেরা উচ্ছৃঙ্খল হচ্ছে। কেন মেয়েদের হয়রানি করছে। হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতেও দ্বিধা করছে না। বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
এ বিষয়গুলো নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এটা করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কোনো গলদ থাকলে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। আমরা কি আমাদের সন্তানদের যতœ নিই? তাদের খোঁজখবর রাখি? রাখি না। উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাই মনে হয় এ বিষয়টি খেয়াল করছি না, যার যার মতো ব্যস্ত থাকছি। নিম্ন-মধ্যবিত্তরা জিপিএ-৫ এর পিছনে ছুটছে। আর উচ্চবিত্তরা ছুটছেন বিদেশি সংস্কৃতি, উগ্রবাদী সংস্কৃতির দিকে।
এমতবস্থায় আমাদের হতাশ হলে চলবে না। তরুণ সমাজকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তারা অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে যেন তারা এগিয়ে যেতে পারে সামনের দিকে, সবসময় তাদের পাশে থাকতে হবে। একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার যেন না করতে পারে, সে জায়গায় তদারকি করতে হবে। অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার আছে, তেমনি পরিবারগুলোকেও সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তাদের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। আমরা উচ্চ-মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া চলতে পারব না। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করার জন্য যত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে আমাদের কারিকুলামে বিস্তারিত আছে। দেখতে হবে, প্রয়োগটা হচ্ছে কিনা। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো দুর্বলতা আছে কিনা? সেই তদারকিটা ভীষণ প্রয়োজন। ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠান, ছেলেমেয়ে খারাপ সেটাও বলা যাবে না। তবে এখন যেহেতু অনেকের মধ্যে উগ্রবাদী চেতনা দৃশ্যমান, সেহেতু এখন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তরুণেরা যাতে এমন বিপথে না যায়।
পরিচিতি: তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
মতামতগ্রহণ: তানভীন ফাহাদ / সম্পাদনা: আশিক রহমান