পাইলটকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ তদন্ত কমিটির আকার বেড়েছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : কক্সবাজারে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি দুই দফা পাইলটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পাইলট এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনার মূল কারণ জানাতে পারেননি তদন্ত কমিটির কাছে। তবে তার কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন তদন্ত কমিটির সদস্যরা পাইলটের সঙ্গে প্রাথমিক কথা বলেন। এরপর তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়। আরও তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হওয়ায় তাকে কমিটির কাছে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সোমবার দুপুরে সময় দেওয়া হয়। পাইলট এখন হাঁটাচলা করার মতো সুস্থ আছেন বলে জানান তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা।
হেলিকপ্টারের দরজা খুলে সেলফি তোলা কিংবা ভিডিও করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে কিংবা ঝাউগাছের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে এমন কিছু জানা গেছে কিংবা পাইলট এমনটি বলেছেন কিনা জানতে চাইলে একজন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিনি সুনির্দিষ্ট করে এই ধরনের কোনো তথ্য দেননি। তিনি তার মতামত ও বক্তব্য দিয়েছেন। এগুলো এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ তদন্তকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার বক্তব্য প্রকাশ করা হলে সমস্যা তৈরি হতে পারে তদন্তকাজে। অন্য সাক্ষীরাও বক্তব্য পরিবর্তন করতে পারে।
সূত্র জানায়, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল কিনা তা সুস্পষ্ট নয়। কারণ হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে রওয়ানা দেওয়ার পর ৯১ মিনিট উড়ে কক্সবাজারে গিয়ে ল্যান্ড করে। কারিগরি ত্রুটি থাকলে তা সম্ভব হতো না। এছাড়াও কারিগরি ত্রুটি থাকলে পাইলট হেলিকপ্টারটি ত্রুটি না সারিয়ে উড়াল দিতেন না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে আকাশে উড়ার পর যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেলফি তোলা কিংবা ভিডিও করার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন প্রমাণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, এর স্বপক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ মিলেনি। তবে সবদিক আমলে নিয়েই তদন্ত চলছে।
এদিকে তদন্ত কমিটির আকার শুরুতে দুইজনে থাকলেও এখন কমিটির আয়তন বেড়ে তিনজন হয়েছে। কমিটিতে নতুন করে সম্পৃক্ত হয়েছে সিভিল এভিয়েশনের মেম্বার (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি এখন সার্বিকভাবে তদন্তকাজ করছেন। তাকে সহায়তা করছেন সিভিল এভিয়েশনের কনসালটেন্ট গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাফর ও আতাউল্লাহ হাসমী। তারা চেষ্টা করছেন তদন্তকাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার।
এর আগেও মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। ওই সময়ে এই দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল মেঘনা এভিয়েশনের ওই হেলিকপ্টার এমডি সিক্স হানড্রেডের নির্মাণে ত্রুটি ছিল। এটা ওই তৈরিকারক কোম্পানির ব্যর্থতা ছিল। যদিও ওই কোম্পানি পরে হেলিকপ্টারটির উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করে দিয়েছিল।
এবারের হেলিকপ্টারেও ওই ধরনের ত্রুটির আশঙ্কা করছেন কিনা কিংবা তেমন কোনো আলামত মিলেছে কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেঘনা এভিয়েশনের অফিস থেকে এ হেলিকপ্টারটি কেনার আগের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কেনা ও এর আনুষাঙ্গিক নথি এবং সর্ব শেষ ফ্লাইট পরিচালনার দিন পর্যন্ত যত নথিপত্র আছে সব জব্দ করা হয়েছে। সেসব নথিপত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা আর ৬৬-এর ইতিহাস দেখছি।
তদন্ত কমিটির সদস্য আতাউল্লাহ হাসমী বলেন, একটি তদন্ত করার জন্য সর্বোচ্চ আঠারো মাস লেগেছিল। আর সবচেয়ে কম সময় লেগেছিল এক সপ্তাহ। তদন্ত চলছে। এখনও পর্যন্ত আমরা এমন কোনো কিছু পাইনি যাতে করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি। তদন্তকাজ শেষে এই ব্যাপারে জানানো সম্ভব হবে। আগামীতে যাতে এই ধরনের আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেই ব্যাপারেও তথ্য দিতে চেষ্টা করবো আমরা। কারণ তদন্তের মূল কাজই হচ্ছে পরবর্তীতে যাতে ওই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম