আগে ঐক্যবদ্ধ হলে কাশ্মীরে এমন দিন আসত না
নূসরাত জাহান: কাশ্মীরে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সহিংসতার দিকে সেভাবে নজর দিচ্ছিল না ভারত সরকার। কোনো রকম দায়সারাভাবে সমস্যার সমাধান করতে চাইছিল। মুজাহিদিন নেতা বুরহান নিহতের ঘটনায় জ্বলে উঠা কাশ্মীর ধীরে ধীরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছিল। সেদিকে যেন লক্ষ্যই করেনি কেন্দ্র। বুরহান নিহতের ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার। কিন্তু ততদিন সমস্যার শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে।
উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা আলোচনার জন্য দরজাই খুললেন না। ব্যস, সেখানেই সমঝোতার চেষ্টা শেষ। এরপর সেনা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিল সরকার। সে গুঁড়েও বালি। কেন্দ্রের বিশেষভাবে যতœশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল কাশ্মীর ইস্যুতে। এ ইঙ্গিতই বিভিন্ন দিক থেকে আসছিল ভারত সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার গা করেনি। সেনা ক্যাম্পে হামলার পর গোটা দেশ নড়েচড়ে বসল। সরকারেরও হয়তো টনক কিছুটা নড়ল। তখন ডাক দিল ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তবে সরকারের এ ডাক আসতে বেশিই দেরি হয়ে গেল।
কাশ্মীরে যতবার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, ততবারই ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দিয়েছে সরকার। কেন্দ্র থেকে রাজ্য, শাসক থেকে বিরোধী- সবাই বিপদের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানায়। এবারও স্বাভাবিকভাবে তাই হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকার থেকে শুরু করে উত্তপ্ত উপত্যকার নেতা, প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের কণ্ঠেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন। গোটা ভারত যেন হাতে হাত রেখে এই দুঃসময় উত্তীর্ণ কাটাবার সঙ্কল্প করেছে।
প্রশ্ন হল, একসঙ্গে কাশ্মীর সংকট কাটানোর সঙ্কল্পটা আরও আগে কেন আসলো না? তাহলে তো এই দিন আসতো। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে কোনো আপস যে থাকতে পারে না- সে নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। কাশ্মীরকে বারবার রক্তাক্ত করার অভিসন্ধি প্রতিহত করতে হবেই এবং তা ঐক্যবদ্ধভাবেই করতে হবে, তা নিয়েও সংশয় নেই। তবে সংকটের শুরু থেকেই যদি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হতো তাহলে হয়তো পানি এতদূর পর্যন্ত গড়াত না এবং এতো প্রাণহানিও হতো না।
কাশ্মীর জুড়ে অশান্তির মেঘ আর সীমান্তের ওপার থেকে হামলা হচ্ছে। কিন্তু এমন নয়। এ দুটোর মধ্যে যোগসূত্র খোঁজা ঠিক হবে না। কারণ এটা ভারতের ঘরোয়া বিষয়। পরেরটা বহিরাগত। মানে পাকিস্তান জড়িত। তাই এ নিয়ে ঘাটাঘাটি তারা করতেই পারে। তবে দোষারোপ না করে উপত্যকার প্রতি আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ কেন্দ্রের। কাশ্মীরে ‘বহিঃশত্রুর’ আক্রমণে রক্তাক্ত হওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হল গোটা জাতি। তবে সংকটের শুরুর দিকে যদি এভাবেই সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতো তাহলে উপত্যকার আকাশটা হয়তো অন্য রকম হতে পারত।
আসলে কাশ্মীরের বিপদ অনেক রকমের। যদি কাশ্মীরকে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই মনে করে ভারত তাহলে তার সব বিপদ, পুরো ভারতের। এই বোধ, আন্তরিকতা, সংবেদনশীলতা নিয়েই গোটা দেশকে কাশ্মীরের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভারত তা পারলে তবেই সমাধান আসবে কাশ্মীরের, নচেৎ আগুন জ্বলতেই থাকবে। সূত্র : গার্ডিয়ান। সম্পাদনা : রিকু আমির ও ফয়সল