রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিবেন না জয়ের বাসায় দুদিন থাকবেন প্রধানমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জাতিসংঘ অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ভার্জিনিয়ায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। সেখান থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন বলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন জানান। জয়ের বাসায় অবস্থানকালে তিনি কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না বলেও উল্লেখ করেছে দূতাবাসের সূত্র।
১৮ সেপ্টেম্বর কানাডা থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছার পর শেখ হাসিনা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি জাতিসংঘ সংলগ্ন ওয়ার্ল্ড এস্টোরিয়া হোটেলে যান। সেখানেই অবস্থান করবেন জাতিসংঘের কর্মসূচি চলাকালে। জাতিসংঘ সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের বাসায় তার সফরসঙ্গীসহ নৈশভোজে যোগ দেন শেখ হাসিনা। প্রবাসের বিশিষ্টজনরাও ছিলেন এ নৈশভোজে।
১৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। এদিনে তিনি রিফিউজি ও মাইগ্রেন্টবিষয়ক অধিবেশনে দুপুর ১২টায় যোগ দিয়ে কর্মসূচির শুরু করেন। কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে তার বৈঠক রয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোমেন জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ৭০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হিসাবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে আরও রয়েছেন এফবিসিসিআইর সভাপতিসহ প্রায় ১০০ জন ব্যবসায়ী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।
১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইউনাইটেড ন্যাশন্স সামিট অন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্যান্টের প্লেনারি সেশনে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ বর্তমানে অভিবাসন ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বৈশ্বিক ফোরামের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এ বছরের ডিসেম্বরে এর নবম বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী প্লেনারি সেশনের বক্তব্যে অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি শরণার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন। একই সঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের শরণার্থীসংকট ও অভিবাসন সমস্যার মূল কারণসমূহ চিহ্নিত করে এর স্থায়ী সমাধানে কাজ করে যাওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের আহবান জানান।
একই সামিটের অংশ হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেনের সাথে বিশ্ব শান্তি ও রিফিউজিসংক্রান্ত শীর্ষক একটি গোলটেবিল সেশনে যৌথ-সভাপতিত্ব করেন। এই সেশনে প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিতকরণে তার সরকারের প্রত্যয় ও অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে আয়োজিতব্য লিডার্স সামিট অন রিফিউজি-এ যোগ দেবেন। এসময় তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে অবস্থান নেওয়া ১০ মিলিয়ন শরণার্থীর বিষয়টি উল্লেখ করে শরণার্থীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। উভয় সামিটে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমার শরণার্থী ও অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক সম্পর্কিত সমস্যাটির একটি স্থায়ী, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিষয়টি তুলে ধরবেন।
২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন। একই সাথে, তিনি ২০৩০ সালের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করবেন এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরবেন।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় হাই লেভেল প্যানেল অন ওয়াটারের একটি বিশেষ বৈঠকে এ প্যানেলের একজন মনোনীত সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। গত ২১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডার পানিসম্পদের প্রাপ্যতা ও ব্যবস্থাপনা এবং সকলের জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ‘প্যারিস চুক্তি’তে পানিসম্পর্কিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে এ প্যানেলটি গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, মরিশাস, মেক্সিকো, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল ও তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী এই প্যানেলে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী রাতে গ্র্যান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক সার্বজনীন সংবর্ধনা সভায় যোগ দেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মিশনে সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন এবং ঐ দিনই ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম