গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনপ্রতিনিধি এবং জনপ্রশাসনের সম্পর্ক
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা একান্ত বিবেচ্য। রাজনৈতিক নেতৃত্বধীনে জনপ্রশাসকরা আনুগত্যশীল হবেন এটাই স্বাভবিক। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট যোগ্যতার পরিচয় প্রদান একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ জন-প্রতিনিধিগণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে অস্থায়ী এবং জনপ্রশাসকগণের পদ স্থায়ী। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়Ñ বৃটিশ পার্লামেন্টের ঐতিহ্য এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকদের ক্ষমতা ভারসাম্য রক্ষা হয়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে স্বেচ্ছাচারিতা থাকে না, এইজন্যে বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে আইনসভাকর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভাপতি স্থায়ী কমিটির আইনসভার পক্ষে কার্যপরিচালনার জন্যে নির্বাচিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সরকারের জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকগণ নিয়ন্ত্রিত থাকেন। অনেক গণতান্ত্রিক দেশে ন্যায়পাল (ঙসনঁফংসধহ) প্রতিষ্ঠা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ন্যায়পাল হলো সাংবিধানিক সংসদীয় কার্যালয় বা সরকারি প্রশাসনকর্তৃক জনগণের বিরুদ্ধে কৃত অন্যায় অসুবিধার বিরুদ্ধে আইনসভা থেকে জনগণের পক্ষে এসব অনিয়ম প্রতিকারের দায়িত্বপালন করে। বাংলাদেশর সংবিধানেও এ বিধান রাখা হয়েছে (৭৭)।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকদের সু-সম্পর্কের উপর নির্ভর করে সমস্ত জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সন্মানের ভিত্তিতেই এ সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব। দেশ ও দেশের জনগণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে এ ধারণা থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের জন্যে কার্যকর ও অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করা যেতে পারে। জন-প্রতিনিধিদের চিন্তা-চেতনার ফসল থেকে সৃষ্টি নীতিসমূহ বাস্তবায়িত হয় জন-প্রশাসকদের দ্বারা। সেক্ষেত্রে জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকের মূল লক্ষ্য দেশ ও মানুষের কল্যাণ। এ প্রয়াসকে সামনে রেখেই জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকদের ভূমিকা কার্যকর করাই দেশ ও মানুষের জন্য কল্যাণকর।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চাই কার্যকর সংসদ এবং দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা। গণপ্রতিনিধিগণ সংসদে আইন প্রণয়ন করে থাকেন আর জন প্রশাসকগণ আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে যাবতীয় তথ্যাদি উপস্থাপন এবং মাঠ পর্যায়ে সরকারি নীতি বাস্তবায়ন করে থাকেন। অন্যদিকে সাংসদগণ কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই সরকারের নীতি বাস্তবায়নে একমাত্র সফল জন-প্রতিনিধিমূলক সরকার গঠনে সহায়ক হতে পারে আর দক্ষ জন-প্রতিনিধিদের ও জন-প্রশাসকদের কর্মকা-ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে সবচেয়ে সুদৃঢ়ভাবে। তাই আজকের পরিবর্তিত বিশ্ব আঙ্গিকের প্রেক্ষিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার উপরই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর একবিংশ শতাব্দির প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার উপরই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর একবিংশ শতাব্দির বড় চ্যালেঞ্জ হবে মানুষের সৃজনশীলতার প্রতিযোগিতা, সেই জন্যই মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নটি আজ বিশ্ব পরিম-লে স্থান পাচ্ছে গভীর গুরুত্ব সহকারে। বিশ্বের কোনো দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে সেটা বিশ্ব বিবেককে সোচ্চার হতে দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাই জন-প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসকগণের সুষ্ঠু সাধন করে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তাই প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবেই সংজ্ঞায়িত করেছেন; ‘উবসড়পৎধপু রং ঃযব এড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ঃযব চবড়ঢ়ষব, নু ঃযব চবড়ঢ়ষব ধহফ ভড়ৎ ঃযব চবড়ঢ়ষব.’ জন প্রতিনিধি ও জন-প্রশাসনের সঠিক প্রতিফলন এবং তাদের সুষ্ঠু সমন্বয়ই অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। (শেষ)
সম্পাদনা: আশিক রহমান