আমাদের মনের পশু কি বধ হয়েছে?
সৈয়দ রশিদ আলম
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে লাখ লাখ বনের পশুকে বধ করা হয়েছে। আরবি ভাষায় যাকে বলা হয়েছেÑ কুরবানি। হিন্দি ভাষায় যাকে বলা হয়েছেÑ বলি। পৃথিবীর সকল ধর্মে, সকল ধর্মগ্রন্থে কুরবানির কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষের কাছে কুরবানি বলতে বনের অবোধ প্রাণী হত্যা মনে করা হয়, তারা মনে করেন তাদের কুরবানি হয়ে গেছে। এদেশে বিগত ১৫ বছর থেকে লক্ষ্য করছি, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে ফ্রিজ ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার ফ্রিজ বিক্রি করছেন। প্রচ- গরমের সময় যতটা ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি ফ্রিজ বিক্রি হয় কুরবানির ঈদের সময়। লক্ষ্য থাকে, অবলা প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছে তার মাংস অন্তত ছয়টা মাস যেন খেতে পারি। দেশের দরিদ্র মানুষগুলো অপেক্ষায় থাকেন কুরবানি ঈদের সময় বিত্তবানদের কাছ থেকে মাংস পাবেন আর কয়েকদিন সবাইকে নিয়ে কুরবানির ঈদের মাংস খাবেন। কিন্তু মাংসগুলো যদি বড় বড় ফ্রিজের মধ্যে চলে যায় তাহলে অসহায় গরিব মানুষগুলো কিভাবে মাংসের তৃপ্তি মিটাবেন? ভোগবাদীরা নিজেদের মতো করে পশু বধকে যেমন কুরবানি মনে করেন, তেমনি অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোকে বোকামি মনে করেন। পৃথিবীর যে মানুষ, তিনি যে ধর্মের অনুসারী হন না কেন, তিনি যদি মনের পশুকে বধ না করতে পারেন, তাহলে তিনি সারাজীবন বনের পশু বধ করে যাবেন, কিন্তু কোনোদিনই অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারবেন না। অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যিনি শিক্ষা দিবেন সেরকম শিক্ষক এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সব ধর্মের শিক্ষকেরা ভোগবাদীতে মেতে উঠেছেন। মানুষ ধর্ম পালন করছে, একই সঙ্গে নিষ্ঠুরতা অব্যাহত রাখছে। কারণ যিনি মনের পশুকে জবাই করতে পারেননি তিনি হয় বনের পশুকে হত্যা করবেন, তা না হলে ধর্মের নামে প্রতিপক্ষ ধর্মবিশ্বাসীকে হত্যা করছেন। এটাই তার কাছে মনে হচ্ছে কুরবানি। মহাপুরুষরা অন্যের ধর্মের মানুষের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, অন্যের জন্য জীবন বলিদান বা কুরবানি এটাই প্রকৃত কুরবানি। চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন, এর ফলে এতিমরা আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ছেন। দেশের এতিমখানাগুলোতে তাদের হক ঠিকমতো যাচ্ছে না। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যিনি জগতের জন্য রহমতস্বরূপ তিনি এতিমদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি শুধু এতিমদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন, কোন ধর্মের অনুসারী এতিমদের পাশে দাঁড়াতে হবে, তা তিনি বলেননি। অর্থাৎ সব ধর্মের এতিম অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে দিয়ে আমরা মহানবী (স.)-এর শিক্ষাকে অনুসরণ করতে পারি। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কিভাবে মনের পশুকে বধ করতে হয়। মনের পশুকে যদি বধ করতে পারি তাহলে আমরা যেখানেই যাব, সেখানেই আলোকরশ্মি পৌঁছে যাবে।
লেখক: কলামিস্ট / সম্পাদনা: আশিক রহমান