অশুভ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে
রবিউল আলম
কুরবানির চামড়া নিয়ে সরকার ও জনসাধারণকে জিম্মি করে ট্যানারির মালিক, পোস্তার আড়ৎদারেরা যখন সিন্ডিকেট করে জাতির সঙ্গে, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তামাশা করে তখন হতাশ না হয়ে পারি না। সরকার চামড়াশিল্প উন্নয়নে জনগণের কষ্টার্জিত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে হেমায়েতপুরে আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে। প্রত্যাশা ছিল, চামড়া রপ্তানি করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ অনেক সুনাম অর্জন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের চামড়ার যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ট্যানারি স্থানান্তরে তালবাহানা করছে। কিছু সফল ট্যানারির মালিক ইতোমধ্যে উৎপাদনে যেতে সক্ষম। সরকার ৫০টি ট্যানারি নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করলে চামড়ার সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম হবে। বিশ্বাস করি, কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক রাষ্ট্রীয় সম্পদ চামড়া পাচার করতে পারে না। যারা সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কুরবানির চামড়া ক্রয় করে না, চামড়া রক্ষা করে না তাদের কাছে জবাব চাইতে হবে। সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ দিয়ে তারা কী করছেন, আড়ৎদার কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কত টাকা কমিশন (উৎকোচ) আদায় করেন, ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করছেন কিনা এবং বাজারের সঙ্গে চামড়ার মূল্যের সামঞ্জস্য আছে কিনা? শুধু কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নজরদারি করে পাচার ঠেকানো যাবে না। ভারতে কাঁচা চামড়ার মূল্য প্রতি ফুট ৯০ টাকা, আর বাংলাদেশে ৪০ টাকা। দামের এই বৈষম্য দূর করতে হবে। পোস্তার আড়ৎদার ও ট্যানারি মালিকদের মাঝে অঘোষিত, অলিখিত চুক্তিÑ যাকে আমরা সিন্ডিকেট বলি, তাদের আড়তের মাধ্যমে চামড়া কিনতে হবে, যাতে আড়ৎদারেরা ইচ্ছেমতো কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কমিশন আদায় করতে পারে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে হবে। যাদের অবহেলায় জাতীয় সম্পদ কুরবানির চামড়া নষ্ট হলো, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। লবণের কারসাজি করে যারা কুরবানির চামড়া জিম্মি করেছে, তাদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। শুধু মৌসুমী ব্যবসায়ীকে উপহাস করলে সমস্যার সমাধান হবে না। কুরবানির এক কোটি চামড়া ১শ জন ট্যানারির মালিক, ২৫৩ পোস্তার আড়ৎদার রক্ষা করতে পারে না। কুরবানির চামড়া রক্ষা করেÑ এতিমখানা, মাদ্রাসার ছাত্র, মৌসুমী ব্যবসায়ী, মাংসশ্রমিক, মাংস ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদেরকে রাষ্ট্র ও ট্যানারির মালিকগণ। তাদের পুরস্কৃত উচিত। এটা না করে পোস্তার আড়ৎদারদের নিয়ে তিরস্কার ও তাদের কার্যক্রমকে নিরুৎসাহিত করবেনÑ সেটা সঠিক নয়।
কুরবানির চামড়া পাচার প্রতিরোধ, চামড়া রক্ষা করা, বহির্বিশ্বে বাজার সম্প্রসারণ, হেমায়েতপুরে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর, হাজারীবাগ ও পোস্তার চামড়া নিয়ে তৎপর অশুভ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি থাকতে হবে।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি / সম্পাদনা: আশিক রহমান