বিশ্বের নজর কাড়ছে তুরস্কের ইসলামিক পোশাকের ‘ফ্যাশন বিপ্লব’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের লম্বা, চটপটে সুন্দরী মডেলরা মরোক্কান সুর-মূর্ছনার তালে তালে ইস্তাম্বুলে ক্যাটওয়াক করছেন। প্যারিস বা নিউইয়র্কে তারা ডিজাইনারদের দ্বারা তৈরীকৃত হাল ফ্যাশনের ড্রেস পরে সাধারণত র্যাম্পে হাঁটেন কিন্তু ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন প্রদর্শনীতে সেই মডেলরা হাই হিলের সাথে লম্বা বোরকা ও বর্ণিল হিজাব পরে অংশ নিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস
ইস্তাম্বুল মডেস্ট ফ্যাশন সপ্তাহের অংশ হিসেবে অটোমান যুগের রেলস্টেশনে পুরাতন মডেলের ট্রেন বগিতে ওই ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। এটি রিয়াদ বা কাবুলের মতো চিরাচরিত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পোশাকের ফ্যাশন শো নয়, বরং ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানটি বর্ণিল, চমকপ্রদ ও সৃষ্টিশীল ইসলামী পোশাকের ফ্যাশন শো। এখানে এসব পোশাকের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। ইউরোপে যখন ইসলামী সাঁতারের পোশাক বুরকিনি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে তখন ইস্তাম্বুলে ইসলামী পোশাককে ধর্মনিরপেক্ষতার বিপক্ষে নারীদের স্বাধীনতা বলে মনে করা হয়। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের শাসনকালে ইস্তাম্বুল হয়ে উঠেছে ইসলামী ফ্যাশনের রাজধানী। পূর্ববর্তী কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থায় হিজাব বা স্কার্ফকে অনগ্রসরতা বলে বিবেচনা করা হতো এবং সরকারি অফিস আদালত ও স্কুল-কলেজে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
সাম্প্রতিককালে ফ্রান্সে যখন বুরকিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তখন তুরস্কে প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ অফিসারদের হিজাব পরার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ইসলামী শাসনব্যবস্থার আশ্রয়ে এবং তুর্কিদের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের পরিবর্তন হওয়ায় ইস্তাম্বুলে হিজাব বা স্কার্ফের একটি বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। এমনকি সেখানে হিজাবী ফ্যাশন হাউজ, ম্যাগাজিন, ব্লগারস এবং ইনস্টাগ্রাম তারকাও তৈরি হয়েছে। এরদোগান পতœী এমিনি এরদোগান এবং কাতারের সাবেক এক আমিরের স্ত্রী শেখা মোজাহর মতো প্রভাবশালী নারীরা তরুণীদের নিকট ফ্যাশন আইকন হিসেবে স্বীকৃত। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউজ মোদানিসার কর্ণধার করিম তুরে বলেন, ‘প্রচলিত কালো বোরকার পরিবর্তে মুসলিম নারীরা এখন ফ্যাশনেবল বোরকা ও স্কার্ফের দিকে ঝুঁকছে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য নারীরা যেন পোশাক পরিধান করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন’। তুরে বলেন, তিনি পুরোপুরি ইসলামিক পরিবার থেকে আসেন নি। কিন্তু তিনি এরদোগানের সমর্থক।
তিনি বলেন, ‘আমার মা বোরকা পরেন কিন্তু আমার বোন তা পরেন না। এটাই তুর্কি পরিবার’। ইস্তাম্বুলের ট্রেন স্টেশনে আয়োজিত ফ্যাশন শোর একজন আয়োজক হলেন তুরে। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে ডিজাইনাররা ওই ফ্যাশন শোতে অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু শোতে অংশ নেয়া মডেলদের অধিকাংশই অমুসলিম। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের মডেলরা তুর্কি নারীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত লম্বা। ফলে পোশাক প্রদর্শনী ও আকর্ষণ বাড়াতে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।
মুসলিম ফ্যাশন ডিজাইনাররা চেষ্টা করছেন কিভাবে একজন মুসলিম নারীকে একই সাথে ফ্যাশনেবল ও ধর্মীয় শালীনতাপূর্ণ পোশাক সরবারহ করা যায় বলে জানিয়েছেন আমস্টারডম থেকে আগত ৪০ বছর বয়সী মুসলিম ফ্যাশন ডিজাইনার মিস সাদোক। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ