পাকিস্তানের ভূমি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে না দেওয়ার আহ্বান কেরির
ইমরুল শাহেদ : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি পরমাণু সম্পর্কিত নিয়ম-নীতি মেনে চলার এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন পাকিস্তানকে।
ফার্স্টপোস্ট ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকা-কে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের অনেক কিছু করণীয় আছে। তবে পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে সন্ত্রাসী কর্মকা- রুখে দেওয়ার জন্য দেশটি প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে বলে কেরি উল্লেখ করেন।
তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে তেহরিকে-ই-তালেবানের তৎপরতা সম্পর্কে পাকিস্তানকে সাবধান করে দেন। এ দুটি দেশের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের নানা বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
জন কেরি পাকিস্তানকে এ পরামর্শ দিলেন তখনই যখন ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি সেনা ছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। জন কেরি পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছেন সন্ত্রাসীরা যাতে পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহার করতে না পারে। ভারতের অভিযোগ- উরি হামলার নেপথ্যে হাত রয়েছে পাকিস্তানের। পাকিস্তান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, বার্তা সংস্থা কলকাতা জানিয়েছে, মঙ্গলবার উরি সেক্টরের লাচিপুরায় ১০ জঙ্গিকে খতম করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এদিন বিকালে ১০ থেকে ১৫ জন জঙ্গি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছিল। সেইসময় হামলা চালায় সেনারা।
বার্তা সংস্থাটি উল্লেখ করে, আবারও সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে জম্মু-কাশ্মীরের উরির সেনা ছাউনিতে মঙ্গলবার গুলি বর্ষণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানান হয়েছে, মঙ্গলবার ভারতীয় সীমানা বরাবর আচমকাই গুলি চালাতে শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। টানা ২০ মিনিট ধরে ছোট এবং কিছু অটোমেটিক বন্দুক দিয়ে চালানো হয় প্রায় কুড়ি রাউন্ড গুলি। এই গুলি বর্ষণের ফলে পাকিস্তান আবারও লঙ্ঘন করল ভারতের সঙ্গে হওয়া ২০০৩ সালের সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি। সেই চুক্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সীমানা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অকারণে গুলি গুলিবর্ষণ করা যাবে না।
গত রোববার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, উরির হামলাকারীরা কেউ নিস্তার পাবে না। এ বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও ডাকেন সোমবার। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অজিত ডোভাল ও সেনা প্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ। তারা সাউথ ব্লকে একসঙ্গে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করেন। সেনাদের স্পেশাল ফোর্স ব্যবহার করে আচমকা অপারেশন চালানো নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। পাকিস্তানকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়, তা নিয়ে এখনও জোর আলোচনা চলছে প্রশাসনের। যদিও ভারত বলছে, তারা পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে চায়। উরি হামলায় পাকিস্তানের দায় প্রমাণ করতে সব রকম তথ্যপ্রমাণ দাখিল করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভারত। এই হামলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সব প্রমাণই রয়েছে ভারতের হাতে। জিপিএস ট্র্যাকার খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, যারা এসেছিল তারা যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান থেকে। অস্ত্রতেও মিলেছে পাকিস্তানের ছাপ। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। এর আগে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তবে একের পর এক সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি আক্রমণে ভারতীয় সেনাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রের কাছে পাকিস্তানের ভিতরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর হামলার আবেদন জানাতে চলেছে সেনা। পাকিস্তানকে চাপে রাখতেই স্বল্পমাত্রায় হামলা করতে চায় তারা। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে এই হামলা চালানো হবে। সম্পাদনা : রিকু আমির