গোয়েন্দা তথ্য : তছনছ হয়ে গেছে নব্য জেএমবির ভীত
আজাদ হোসেন সুমন : মাস্টারমাইন্ড তামিম ও মেজর জাহিদুল নিহত হওয়া মধ্য দিয়ে তছনছ হয়ে গেছে জঙ্গিদের গুরুত্বপূর্ন অংশ নব্যধারার জেএমবি। তাদের ভীত হয়ে গেছে একেবারে নড়বড়ে। সমন্বয়ক বা অর্থের যোগানদাতা হারিয়ে নব্যধারার জেএমবি সদস্যরা চোখে শর্ষে ফুল দেখছে বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় আটক হওয়ার পর ময়মনসিংহে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জঙ্গি শফিউল ইসলাম ডন, দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সাহাবুদ্দিন শিহাব রকি এবং কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। এদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে গোয়েন্দরা নিশ্চিত হয়েছেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে নব্য জেএমবির সব প্ল্যান প্রোগ্রাম। তামিম চৌধুরী প্রায় ৩ বছর আগে কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর নব্য জেএমবির হাল ধরে। পুরোনো জেএমবির ‘ধীরে চলো’ নীতি থেকে বেরিয়ে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে যারা কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তৎপরতা শুরু করে। পকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈয়বার একাধিক নেতার সঙ্গে তামিম চৌধুরীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একাধিক ইসলামী এনজিও জঙ্গি সংগঠন থেকে অর্থ অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল তামিম চৌধুরীর। সে প্রায়ই চোরাই পথে ও নকল পাসপোর্ট ব্যাবহার করে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে যেত। দেশে ফিরে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে থাকা জঙ্গি ডেরায় অবস্থান নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতো। এরপর বছর দু’য়েক আগে মেজর জাহিদুল নব্য জেএমবির সাথে যুক্ত হলে এদের তৎপরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। মেজর জাহিদুল ছিল সংগঠনটির সামরিক প্রশিক্ষক। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কর্মকান্ড অনুসরণ করেছে। জেএমবির বেশ কিছু সদস্য গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মেজর জাহিদুল ও তামিম চৌধুরী নিহত হলে অসহায় হয়ে পড়ে নব্য জেএমবির সদস্যরা। সূত্র মতে, যে তিনটি ধারার জঙ্গিরা মিলে নব্য জেএমবির কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের একটি অংশ এসেছে সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দূর্গম অঞ্চল থেকে থেকে প্রশিক্ষপ্রাপ্ত। আরেকটি অংশ এসেছে পুরনো জেএমবি থেকে। তৃতীয় অংশটিতে আছে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু এলাকায় অবিচ্ছেদ্যভাবে কর্মকান্ড চালিয়ে কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী জঙ্গিরা। তারা সম্প্রতি ‘দাওলাতুল ইসলাম’ নামও ব্যবহার করেছে। প্রথম ধারাটির প্রধান ছিল তামিম চৌধুরী। গুলশান ও কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের কয়েকজন এবং পলাতক কিছু জঙ্গিও দেশের বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ওই জঙ্গিরা শিক্ষত এবং প্রযুক্তিতে পারদর্শী। কয়েকটি নিষিদ্ধ অ্যাপসে তারা যোগাযোগ করার কৌশল শেখায়। তারা দেশে ফিরে অন্যদের অনুপ্রাণিত করে এবং অর্থ সহায়তা দেয়। পুরনো জেএমবি থেকে আসা জঙ্গিরা সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের এলাকা ঠিক করে মাঠে নামতো। কিন্তু এখন এই নব্য জেএমবির সদস্যরা অব্যাহত পুলিশী অভিযানে কোথাও স্থির থাকতে পারছে না। যেখানে তারা আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে-সেখানেই পুলিশ হানা দিচ্ছে। ফলে সংগঠিত হওয়া, নাশকতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের চেয়ে নিজেদের বাঁচাতেই এরা ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, নব্য জেএমবির কয়েক জন চিহ্নিত সদস্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এরা ধরা পড়লেই নব্য জেএমবির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকা হয়ে যাবে বলে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মন্তব্য করেছেন।