‘মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না, মনে হয় ছেলে দুটো নিয়ে বাঁচতে পারবনা’
আজাদ হোসেন সুমন: কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। কিন্তু মামলা তদন্তের অগ্রগতি নেই। রহস্যের অন্তরালে রয়ে গেছে মামলার তদন্ত। এখন মনে হয় ছেলে দুইটাকে নিয়ে বাঁচতে পারব না। তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেছেন, বাসা থেকে বের হলে অজ্ঞাত লোকজন ছবি তুলে রাখে। সন্তানহারা মা আনোয়ারা বেগমের বুকফাটা আহাজারিতে কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে গতকাল। এই মায়ের অঝোর ধারায় কান্নায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিচারের দাবিতে জড়ো হওয়া কয়েকশ মানুষ। তনু হত্যাকা-ের ছয় মাস উপলক্ষে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার উদ্যোগে বেলা সাড়ে ১১টায় কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে কুমিল্লার অচিন পাখি বাউলগোষ্ঠীর শিল্পীরা জড়ো হন। এরপর সমাবেশে যোগ দেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম ও তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেল। সেখানে আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়ে গেল, ছয় মাস অইল। কই, কিছুই তো অইল না। ওরা (সিআইডি) দেখতাছি, খালি দেখতাছি কইতেছে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আইও পাল্টায়। মামলার কিনারা হয় না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ৬ মাস হয়ে গেলেও হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে না পারা বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পিতভাবে সময়ক্ষেপন করে তনু হত্যার বিচার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে একটি প্রভাবশালী মহল। তারা অবিলম্বে ডিএনএ প্রতিবেদন অনুযায়ী তনু হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
এদিকে, ডিএনএ প্রোফাইল না মেলানোর কারণ জানতে চাইলে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জালাল উদ্দীন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘তনুর মা যাদের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য বলছেন, আমরা ওনার বক্তব্যের সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই করছি। হঠাৎ করে এগুলো করা যায় না। এ জন্য সময় লাগবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।’
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার পাশের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২১ মার্চ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে তার প্রথম ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই দিন অজ্ঞাতদের আসামি করে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন। গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ জেলার মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামের কবর থেকে উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত ৪ এপ্রিল দেয়া হয় প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত না থাকায় সমালোচনার মুখে পড়ে ফরেনসিক বিভাগ। ১৬ মে তনুর কাপড়ে ৩ পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া যাওয়ার খবর সিআইডির কুমিল্লা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আবারো আলোচনায় উঠে আসে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। ১২ জুন ২য় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা গাজী ইব্রাহীমকে পরিবর্তন করে সিআইডির এডিশনাল এসপি জালাল উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি তদন্তে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে তনুর পরিবারের পক্ষ থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হচ্ছে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তনুর মা ছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চ কুমিলার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান ও কুমিলার অচিন পাখি বাউলগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা বজলুর রহমান বাবুল ও গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, আমরা এর শেষ দেখে নেব। তনু হত্যা মামলার বিচার বাংলার মাটিতে হবে এবং হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম