নির্দিষ্ট করে সময় বলা সম্ভব না কেন্দ্রীয় ব্যাংক মহাব্যবস্থাপক রিজার্ভ চুরির ১১৯ কোটি টাকা দু-একদিনেই পাচ্ছি : অর্থমন্ত্রী
হাসান আরিফ : বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভের প্রায় ১১৯ কোটি টাকা দু’একদিনের মধ্যেই হাতে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এই প্রতিবেদককে বলেন, আদালতের রায় হয়েছে, এখন দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করবে। এরপর চুরির অর্থ নিজেদের নিয়ন্ত্রণের কি পদ্ধতিকে কোথায় নেওয়া হবে তা ঠিক হবে। তাই বিষয়টি সময় সাপেক্ষ বিষয়।
এদিকে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে হ্যাকারদের কাছ থেকে যত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে তার পুরোটা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন,‘না না, সেটা তো আমরা বলতে পারব না। হুইচ মানি দে হ্যাভ কালেকটেড, ইটস ইজিলি অ্যাভেইলঅ্যাবেল, বাকিটা কেইসের ব্যাপার-ট্যাপার, সুতরাং ওটা বলা মুশকিল।’
গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ফিলিপাইন থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের উদ্ধার হওয়া ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার পেসো (মোট ১১৯ কোটি টাকা) বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে আদেশ জারি করেছে ফিলিপাইনের রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্ট।
আদালতের রায়ে ফেরত পাওয়া টাকা বাংলাদেশে আসতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বোধ হয় আইদার আমরা পেয়ে গেছি, আজকে কালকের মধ্যেই পাচ্ছি। আমার মনে হয় আমরা পেয়েই গেছি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এই প্রতিবেদককে বলেন, আদালতের রায় হওয়া মানেই চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া গেছে তা না। এখন এই টাকা ফেরত আনতে হলে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিত আলোচনা করবেন। এই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে এই অর্থ কিভাবে কোথায় বাংলাদেশের পক্ষ্যে নেওয়া হবে। বিষয়টি এমনও হতে পারে এই অর্থ সরাসরি সরাসরি নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ-এ জমা হতে পারে অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও জমা হতে পারে। তাই এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া ফিলিপাইনের নিজস্ব কিছু দাপ্তরিক কাজ আছে সে জন্যও সময় লাগবে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরতের বিষয়টি জানানো হয়। একই দিনে তাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে। শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরপর গত ১৫ মার্চ সরকার এ ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০ মার্চ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর ২২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি।
এরপর গত ৩০ মে ফরাস উদ্দিন আহমেদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন আগামী ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম