তিন প্রক্রিয়ায় অর্থ ফেরত দিতে চায় ফিলিপাইন : জন গোমেজ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.)
জন গোমেজ বলেছেন, ফিলিপাইনের আদালত বাংলাদেশকে দেড় কোটি ডলার ফেরত দেওয়ার জন্য বলেছে। আদালতের রায়ের পর আমরা অর্থ ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করতে যাচ্ছি। এই অর্থ তারা তিন প্রক্রিয়ায় ফেরত দিতে চেয়েছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে নগদে ফেরত,অপরটি চেকের মাধ্যমে দেওয়া। শেষ অপশন হচ্ছে ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এই সব কথা বলেন।
জন গোমেজ বলেন, তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় অর্থ ফেরত নেওয়া হবে এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আমাদের সরকারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। এই কারণে আমরা ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষকে এখনও কিছু বলতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার আমাদেরকে প্রক্রিয়া জানালে এই ব্যাপারে তাদেরকে জানাবো। তিনি বলেন, আমরা এই ব্যাপারে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। তিনি বলেন, এখন আমরা যে অর্থ আদালতের রায়ের মাধ্যমে ফেরত পাচ্ছি সেই অর্থ কিম অং ফেরত দিয়ছিলো। এই অর্থ রাখা হয়েছিল তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তা রাখলেও ওই অর্থ ফিলিপাইন আমাদেরকে মৌখিকভাবে দিয়ে দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দিতে পারছিল না। কারণ ওই অর্থ অবৈধভাবে ফিলিপাইনে গেছে। সেই অর্থ চাইলেই যে কোন উপায়ে ফেরত দেওয়া যাবে না। এটা ফেরত নিতে হলে আইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রয়োজন ছিল। এখন তা সম্পন্ন হয়েছে। আদালত অর্থ ফেরত দেওয়ার আদেশ দেওয়ায় এটাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কোনো দেশের অর্থ যদি অন্য কোনো দেশে বেআইনিভাবে চলে যায় ওই অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের আইন রয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি এই ব্যাপারে ফিলিপাইনের আইনজীবী, প্রধান আইন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। ফিলিপাইন বাংলাদেশের কাছ থেকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে অর্থ রাখা ও ওই অর্থ যে চুরি হয়েছে এই ব্যাপারে যে সব নথিপত্র চেয়েছিল সেগুলো সব ফিলিপাইনের কাছে পাঠায়। এর প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়ায় ফিলিপাইন সরকার অর্থ ফেরত দিতে সম্মত হয়। আর আইনি প্রক্রিয়ায় এটা করতে হয়েছে কারণ কোনো দেশে বেআইনিভাবে কিংবা অবৈধভাবে অর্থ চলে গেলে সেই অর্থ চাইলেই ওই দেশের সরকার ফেরত দিতে পারে না। এই জন্য আদালতের আদেশের মাধ্যমেই নিতে হয়। এটা তারা আমাদের জানানোর পর আমরা আইনি প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করি। আমরা এখন আদালতের আদেশ পেয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব এই অর্থ আমাদের ফেডারেল রিজার্ভে নেব।
তিনি বলেন, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশ চাইলে তারা অর্থ নগদে নিতে পারে। কিন্তু আমরা সেটি নিতে পারবো না। এরমধ্যে বড় অংকের অর্থ ফিলিপাইনি মুদ্রায় রয়েছে। সেই মুদ্রা নিয়ে আমাদের লাভ হবে না। তারা বলেছে চেক নিতে চাইলে তারা চেকের মাধ্যমে দিবে। কিন্তু এখনও চেক নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছেÑ ওয়্যার ট্রান্সফার করা। সেটা করা হলে সব দিক থেকেই ভালো হবে।
তিনি বলেন, আমরা এই অর্থ ফেরত পাওয়ার পর ঘটনার পর থেকেই নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচিছ। অবশেষে সামান্য কিছু অংশ হলেও আমরা ফেরত পাচ্ছি।
বাকি অর্থের কোনো সন্ধান জানতে পেরেছেন কিংবা ফিলিপাইনের কোনো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে আমরা কিছু জানতে পারিনি। তারাও আমাদেরকে কিছু জানায়নি। তবে আমরা হাল ছাড়িনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই অর্থের হদিস পেলে একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত নেওয়া হবে। আর যদি অর্থ যার কাছে আছে তিনি কিম অংয়ের মতো সহজে ফেরত না দেন সেই ক্ষেত্রে আমাদেরকেও আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এবং অ্যাগমন্ট গ্রুপের আইন ও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের চুরি অর্থ পুরোটাই আরসিবিসির কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এই জন্য তাদের কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করে বাংলাদেশকে ফেরতও দেওয়া সম্ভব হতে পারে বলে ফিলিপাইন ও ফেডারেল রিজার্ভ আভাস দিয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, মোট চুরি হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী কিম অং জমা দেন। ওই অর্থ ফিলিপাইনের আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফেরত পাচ্ছে। আর ওই অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাদের আদালত নির্দেশ দিয়েছে এ বিষয়টি বাংলাদেশকে জানানো হয় ফিলিপাইন থেকে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম