কারাবন্দিরা ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থদ- পরিশোধ করতে পারবেন
এস এম নূর মোহাম্মদ : সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়াই আসামির প্রতিনিধি বা আত্মীয়স্বজন অর্থদ- পরিশোধ করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এটি পরিশোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে রায় প্রদানকারী আদালত যে জেলায় অবস্থিত বা আসামি যে জেলার কারাগারে অবস্থান করবেন- সেই জেলার ব্যাংকে তা পরিশোধ করতে হবে।
কারাবন্দিদের জরিমানা আদায় সহজ করতে গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে জারি করা নির্দেশনায় এসব কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনার অনুলিপি আইজি প্রিজন, দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ বিভিন্ন আদালত, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সব কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- অর্থদ- ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর চালানের কপি কারাবন্দি যে কারাগারে সাজা ভোগ করেছেন, সরাসরি সেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষ ট্রেজারি চালান পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অনলাইনে বা টেলিফোনের মাধ্যমে চালানটির সত্যতা এবং সাজা পরোয়ানায় উল্লিখিত অর্থদ-ের পরিমাণ যাচাই করবেন। এ ক্ষেত্রে আরোপিত সব অর্থদ- পরিশোধিত হয়েছে বলে কারা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে বিধি অনুসারে বন্দিকে মুক্তি এবং অর্থদ- পরিশোধ ও কারাবন্দিকে মুক্তি প্রদানের বিষয় বিচারিক আদালতকে অবহিত করবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে- সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের- রুলস, ১৯৭৩ এর চ্যাপ্টার থ্রি বি এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কারাদ-সহ অর্থদ-ে দ-িত কারাবন্দিদের অর্থদ- পরিশোধ সহজ করতে এ নির্দেশনা প্রদান করা হল।
১৮৮০ সালের এ নিয়ম সহজ করতে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল হাসান ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি পাঠান। রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কারাবন্দিরা সাধারণত আগে কারাদ- ভোগ করেন এবং কারাদ- উত্তীর্ণ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেন। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত অধিকাংশ বন্দির প্রতিনিধি বা আত্মীয়স্বজন আদালতে গিয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করা কঠিন হয়। অনেক সময় আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হয়। আবার কখনো মামলার নথি খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে জরিমানা আদায়ও সম্ভব হয় না।
চিঠিতে আরও বলা ছিল, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বন্দিরা অনেক সময় জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে কারাদ- ভোগ করেন। এতে কারাবাস দীর্ঘায়িত হয়। এর প্রভাবে কারাগারের জায়গা খালি হতে সময় লাগে এবং সরকারেরও ব্যয় বাড়ে। তাই বিষয়টি সহজ করতে অনুরোধ করা হয়েছিল চিঠিতে।
জরিমানা আদায় সংক্রান্ত হাই কোর্টের ৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮০ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, কারা বিধির ৫৩৩ ধারায় বলা আছে, ‘কারা তত্বাবধায়ক বা কারা পরিদর্শক জরিমানার অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ জরিমানা প্রদানের জন্য কারাবন্দির প্রতিনিধি বা আত্মীয়স্বজনকে জরিমানার নির্দেশ প্রদানকারী আদালতে পাঠাবেন’।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো ওই চিঠির পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পাঁচ সদস্যের ওই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসন। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (অর্থ ও উন্নয়ন) মো. যাবিদ হোসেন, স্পেশাল অফিসার বেগম হোসনে আরা আক্তার, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ( সার্বিক) এস,এম, এরশাদুল আলম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মো. আজিজুল হক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার (অর্থ) মো. ইসমাইল হোসন।
কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পাঠালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় তা অনুমোদিত হয়। আর এরপরই গতকাল এ নির্দেশনা জারি করা হয়। সম্পাদনা : রিকু আমির