আইনমন্ত্রী, অর্থপ্রতিমন্ত্রী অ্যাটর্নি জেনারেল, গভর্নর ফিলিপাইন যাচ্ছেন টাকা ফেরত নেওয়া হবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে : অর্থ প্রতিমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আইনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আগামী মাসে ফিলিপাইন যাচ্ছেন। সেখানকার আদালতের রায়ের পর দেড় কোটি ডলার (১২০ কোটি টাকা) কোন প্রক্রিয়ায় কোথায় ও কোন হিসাবে নিবেন সে বিষয়ে আলোচনা করবেন। তাদের সঙ্গে থাকতে পারেন পররাষ্ট্র সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। এ সময়ে তারা বাংলাদেশের অর্থ চুরির বিষয় নিয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। এখন আংশিক অর্থ ফেরত পাওয়ায় ধন্যবাদ দিবেন আর তার কাছে বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা চাইবেন। এছাড়াও তারা সেই দেশের আইনমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, প্রধান আইন কর্মকর্তা, ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন। এ বিষয়টি জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। অর্থ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আদালতের রায়ের পর অর্থটাই্ আমরা পেয়ে গেছি ধরে নিতে হবে। এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি। আমরা যাওয়ার আগে যদি তারা সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে বলে জানায় তাহলে আগেই তা পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা জানিয়ে দেব কেমন করে দিবে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ওই দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। আমরা ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে চেষ্টা করছেন ও সহযোগিতা দিয়েছেন। তার কারণেই অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন বাকি টাকার কোনো সন্ধান মিলেনি। ওই টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
ফিলিপাইন কবে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যাচ্ছি আগামী মাসের প্রথম দিকে। এ মাসের ২৫ তারিখে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন আমরা যেতে পারছি না। কারণ আমাদের যাওয়া ৭-১০ দিন পিছাবে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট এই মাসের শেষ দিকে কাজে ব্যস্ত থাকবেন। সে জন্য আমাদের তিনি সময় দিতে পারছেন না। তার সিডিউল পেলেই আমরা সেখানে যাব।
আদালতের রায়ের পরে এখন অর্থ ফেরত আনা হবে কেমন করে। তিনি বলেন, এখন আমরা অর্থ ফেরত নিতে চাইছি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে। ফিলিপাইনের ব্যাংক ওই অর্থ ফেডারেল ব্যাংকে ফেরত দিবে। এ জন্য আমরা সেখানে যাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়াগুলোর বিষয়েও কথা বলব। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানানো আর বাকি অর্থের সন্ধান জানা।
বাকি টাকার তো এখনো কোনো হদিস নেই, সেটা কি জানা সম্ভব হবে, তিনি বলেন, চেষ্টা করতে হবে। এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ টাকাটা জুয়ার ক্লাবে গেছে। সেখান থেকে কোথায় গেছে এটা এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। তবে ফিলিপাইনের সরকার সেটা বের করার চেষ্টা করছে। আমরা আশাবাদী যে তারা এই অর্থও ফেরত দিবে। এ জন্য সময় লাগবে। তবে কতদিন লাগবে তা বলা যাচ্ছে না।
এখন তো ফিলিপাইনের আদালত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর এটা নিশ্চিত হয়েছে যে টাকা চুরি হয়েছে, কারা জড়িত তাও অনেকটা প্রকাশ হয়েছে। এক্ষেত্রে কি বাংলাদেশের তরফ থেকে কোনো মামলা করা হবে, প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো কোনো মামলা করিনি। তবে মামলা করার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। আলোচনা করার পর মামলা করার জন্য যেসব নথিপত্র সংগ্রহ করার দরকার সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, টাকাটা চুরি হয়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে তারা ড্রয়ারে রেখে দিয়েছে। চাইলেই বের করে দিবে। মামলা করার জন্য আইনি বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী কাজ করছেন। তিনি সব দিক দেখে এ ব্যাপারে মতামত দিবেন।
মামলা করা হলেই সমস্যার সমাধান হবে এমন নয়। মামলা শুরু হয়ে গেলে দুটি সমস্যা হতে পারে। এক হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হবে অন্যদিকে আদালতে মামলা শুরু হলে তা শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে অর্থ ফেরত পেতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ কারণে আমরা মামলা করার বিষয়টিতে এখনই তোড়জোর করছি না। আগে অর্থ উদ্ধার করতে হবে। এরপর আমরা ফিলিপাইনের আদালতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তিনি বলেন, অর্থ গেছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে, মামলা করা হলে তাদেরকেও পক্ষ করা হবে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের কেউ কি এ ঘটনায় জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় বাকি। এরপরই আমরা রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট আমাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করব। সেখানে পুরো রিপোর্টই জানতে পারবেন। কারা কারা জড়িত তা আমি এখন বলতে চাই না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চিহ্নিত করে কাদের গাফিলতি ছিল ও কারা কারা জড়িত সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। ফিলিপাইনও এ ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করছে। সেই সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকও সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, আমরা যে এখন দেড় কোটি ডলার ফেরত পাচ্ছি এটা ইতিবাচক দিক। এই অর্থ আগেই ফিলিপাইনের সরকার উদ্ধার করেছিল। এ জন্য ফেরত পেতে সুবিধা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাকি সাড়ে ৬ কোটি ডলারের হদিস নেই। এটা বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ জন্য আমরা অপেক্ষা করছি যদি এ দেড় কোটি ডলার ফেরত পাই তাহলে ভালো। নাহলে আমাদের মামলা করতেই হবে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ফিলিপাইন সফরকালে সেখানকার সিনেটের প্রেসিডেন্ট, ব্লু রেবন কমিটির চেয়ারম্যান, আইন ও পররাষ্ট্র বিভাগের সচিব, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করার পর সব জানতে পারব। এছাড়া তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা করব। সেই সঙ্গে বাকি অর্থ ফেরতের বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ থেকে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আমরা সেটাও তাদের অবহিত করব। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম