শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, শিক্ষকদের দায়
মো. আনিছুর রহমান
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। এক্ষেত্রে শিক্ষার নিপুণ কারিগর হলেন তৃণমূল পর্যায়ের নিবেদিত সৎ, কর্মঠ, নিষ্ঠাবান, উদারচিত্ত ও সুদক্ষ শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা নিঃস্বার্থভাবে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে যাচ্ছেন। তাদের জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছেÑ শিশুর জীবন, বিকশিত হচ্ছে শিশুর কোমল হৃদয়, তারা কৃতিত্বের ছাপ রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই।
বিদ্যার মতো মূল্যবান সম্পদ এ ভূবনে আর কিছুই নেই। শিক্ষক তার মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকে শিক্ষার্থীদের শাণিত করেন এবং সৎ, দক্ষ ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। একটি জাতির উন্নতি, অগ্রগ্রতি ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে এ জাতির শিক্ষা গ্রহণের ওপর। শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ শব্দ দুটি অঙ্গাঙ্গীকভাবে জড়িত। শিক্ষক বা শিক্ষকবৃন্দ যদি মানসম্মত শিক্ষা প্রদান না করেন তবে দেশ তথা জাতি অবনতির শিখরে আরোহণ করবে। তাইতো শিক্ষকদের এ সেøাগানÑ ‘মানসম্মত শিক্ষা জাতির প্রতিজ্ঞা।’
শিক্ষকদের অফুরন্ত শিক্ষা, শাসন, সংস্কারমুক্ত মনের উদার পরশ, ফলপ্রসূ উপদেশ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার শিক্ষার গুণগতমান বর্ধনে যাদুকরি পরিবর্তন এনে দেয়। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকেরা যে ভূমিকা পালন করেন তা হলোÑ এক. মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ ও হোম ভিজিটের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানো ও তাদের লেখাপড়ার প্রতি অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি। দুই. নিয়মিত কার্যদিবসে পাঠ পরিকল্পনা মোতাবেক শিক্ষাদান কার্য পরিচালনা। তিন. শ্রেণিকক্ষে আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি। চার. পাঠ উপযোগী উপকরণ প্রদর্শন। পাঁচ. ডিজিটাল পদ্ধতি তথা প্রজেক্টরের মাধ্যমে কন্টেন তৈরি করে পাঠ প্রদর্শন। ছয়. খেলার ছলে শেখার সুযোগ তৈরি। সাত. শিখনফল অর্জন করানো। আট. পাঠের সারমর্ম শিক্ষার্থীদের আত্মস্থ করানো এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগে সহায়তা করা। নয়. নকল ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত পরীক্ষার পরিবেশ তৈরি। দশ. প্রতিমাসে মূল্যায়নের সময় স্কোরকার্ড ব্যবহার। এগারো. পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেণিতে বা কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান। বারো. বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটানো এবং তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব সৃষ্টি। তেরো. শিক্ষকতার পেশাকে চাকরি কিংবা বাণিজ্য মনে না করে নৈতিক ও রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব মনে করে শিক্ষাদান কার্য পরিচালনা। চৌদ্দ. শিশুর নৈতিক চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন। পনের. দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধকরণ। ষোল. শিশুর মনুষ্যত্ব গঠনে সহায়তা প্রদান। সতের. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান। আঠারো. খেলাধুলার প্রতি গুরুত্বারোপ ও স্বাস্থ্য সচেতনা বৃদ্ধিকরণ। ঊনিশ. জাতীয় দিবস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানো ও দিবস উদ্যাপনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি। কুড়ি. মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান। একুশ. বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতির প্রতিযোগিতার আয়োজন।
মূলত একটি শিক্ষিত মা হলে যেমন একটি শিক্ষিত জাতি পাওয়া যায়, তেমনি একজন দক্ষ, আদর্শ ও মেধাবী শিক্ষক হলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার আশা করা যায়। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষকগণ যে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে চলেছেন তা প্রশংসার দাবিদ রাখে। কারণ শিক্ষকেরা শিশুদের আগামী যোগ্য নাগিরক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।। তাইতো ব্যাকুল হৃদয় অজান্তেই গেয়ে ওঠে,Ñ ‘কত রাজ্য, কত রাজা গড়িছ নীরবে, কত প্রদীপ তুমি জ্বেলেছ সর্বজনে, হে পূজ্য, হে প্রিয়, সকলের শির তব তোমার চরণে।’
লেখক: উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট
সম্পাদনা: আশিক রহমান