মসজিদে নামাজের জামাতে নারীর অংশগ্রহণ
া হাসান মুহাম্মাদ শরীফ
বিশেষ হেকমতের কারণেই আল্লাহপাক মানুষকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। নারী ও পুরুষ। মানুষ হিসেবে তারা উভয়েই সমান। তবে প্রত্যেক শ্রেণিই কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য, গঠনগত কাঠামো, শারীরিক সক্ষমতা, আকর্ষণ-বিকর্ষণসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রের অধিকারী। স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যের যেমন প্রভাব রয়েছে ঠিক তেমনি ধর্মীয় বিধি বিধান পালনের ক্ষেত্রেও এর বড় একটা প্রভাব রয়েছে। নারীদের বেশীরভাগ বিধানের ক্ষেত্রেই সতর, পর্দা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হয়েছে। যেমন হজের সফরে আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি নারীদের জন্য মাহরামেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢেকে রাখা নাজায়েয হলেও নারীদের অবশ্যই মাথা ঢেকে রাখতে হবে। পরপুরুষের সামনে নারীকে পুরুষের তুলনায় বেশি আবৃত হয়ে থাকতে হবে। আযান ইকামাতসহ আরো বেশ কিছু বিষয়ে নারী-পুরুষের বিধান পালনে পদ্ধতিগত পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এমনই একটি পার্থক্যপূর্ণ বিষয় হলো মসজিদে নামাযের জামাতে নারীর অংশগ্রহণ। রাসুল সা. এর যুগে অনেক নারীই পুরুষের মতো মসজিদে নামাজের জামাতে অংশ নিতেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তিনি কিছু নীতিমালার কথাও বলে দিয়েছিলেন। যেমন- ১. উগ্র কোনো সুগন্ধি বা প্রসাধনী ব্যবহার করে জামাতে আসা যাবে না। [মুসলিম হাদিস-১০২৫] ২. রাস্তার একপাশ দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। [আবু দাউদ হাদিস-৫২৭৪] ৩. তারা সাধারণত রাতের নামাযে (ফজর, মাগরিব, ইশা) আসবে। [বুখারি হাদিস-৮৫৭]
৪. পর্দার ব্যাপারে পূর্ণ যতœবান থাকতে হবে। [সুরা আল আহযাব-৫৯] ৫. নারীর কাতার সবার শেষে থাকতে হবে। [ইবনে মাজাহ হাদিস-১০০০] ৬. পুরুষের আগেই নারীদের মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে হবে। [বুখারি হাদিস-৮২৮] ৭. সর্বাবস্থাতেই পুরুষদের সাথে মেলামেশা এড়িয়ে চলতে হবে। [আবু দাউদ হাদিস-৫২৭৪] ৮. কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতাও ছিলো, পুরুষরা সেজদা থেকে না উঠা পর্যন্ত নারীরা সেজদা থেকে উঠতে পারবে না। [মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বল: হাদিস-১৫৬০০]
এসব নীতিমালা মেনে চলার পরও গৃহস্থালী ও সন্তান-সন্তুতি দেখভালে কিছুটা ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হওয়ায় কোনো কোনো সাহাবী তাঁর পরিবারস্থ নারীদের মসজিদে যেতে আপত্তি জানাতেন। ফলে একবার কিছু নারী মসজিদে আসার ব্যাপারে তাদের স্বামী/অভিভাবকদের আপত্তির কথা রাসুল সা. কে জানালে পুরুষদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তোমরা নারীদের মসজিদে আসতে বারণ করো না। তবে পরক্ষণেই রাসুল সা. একথাও বলেন, মসজিদের চেয়ে ঘরে নামাজ পড়াই নারীদের জন্য বেশি ভালো। [সহিহ ইবনে খুযাইমা হাদিস-১৬৮৪]
নারীদের জন্য তুলনামূলক উত্তম জায়গা থাকতেও রাসূল সা. তাদের মসজিদে আসতে উৎসাহিত করেছেন; এর কারণ হলো, নববী যুগ ছিলো ওহি নাজিলের যুগ। তখন নিয়মিতই নতুন নতুন শরঈ বিধানাবলি নাযিল হতো। আর এগুলো জানার সর্বোত্তম উপায় ছিলো জামাতের নামাজে অংশগ্রহণ। কারণ রাসূল সা. সাধারণত নামাজের আগে বা পরে শরঈ বিধানাবলির শিক্ষামূলক আলোচনা করতেন। রাসুল সা. এর কাছ থেকে সে আলোচনা সরাসরি শুনতেই নারীরা আগ্রহভরে মসজিদে আসতেন।
তাছাড়া নৈতিকতার মানদ-ে সে যুগ ছিলো ইতিহাসের সর্বোত্তম যুগ। নিরাপত্তাহীনতা বা সামাজিক অপরাধ তখন ছিলোনা বললে সামান্য বাহুল্য হবে না। পক্ষান্তরে নববী যুগ পরবর্তী সময়ে শরঈ বিধানাবলি শেখার জন্য মসজিদই একমাত্র জায়গা আর থাকেনি। দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষার এতোটা প্রসার ঘটেছে যে, ঘরে থেকেই কিংবা নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে নানাভাবে অনায়াসেই তা অর্জন করা সম্ভব। অপরদিকে নৈতিকতার অবক্ষয় এবং সমাজ ব্যবস্থায় ক্রম অধঃপতন নেমে আসায় নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন করার পরিবেশ প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যেখানে পরিবেশ ব্যতিক্রম সেখানে বিধানও ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে সচরাচর অবস্থায় ঘরে অবস্থানকারী নারীদের শুধু জামাতে অংশগ্রহণের জন্য মসজিদে যাওয়া আদৌ সমীচিন নয়। হোক তা ওয়াক্তিয়া নামাজ কিংবা জুমআ তারাবি বা ঈদের নামাজ। অনেক মসজিদে সব ধরনের নামাজে নারীদের জন্য একই সাথে জামাতে নামাজের কথা শোনা গেছে। পরবর্তীতে এটাও শোনা গেছে যে, সেখানকার অভিজ্ঞতা খুব সন্তোষজনক নয়।
লেখক: প্রবন্ধকার, শিক্ষক