হত্যাকারীর ক্ষমা নেই
মাসউদুল কাদির
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধের শাস্তিটা দ্রুত জরুরি। অপরাধের শাস্তি হলে তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না। সমাজকে সুষ্ঠু ও গতিশীল রাখার জন্য এসব শাস্তির ব্যাপারে প্রশাসনকে যুগান্তকারী ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হতে হবে। মানুষ হত্যা এখন মামুলি ব্যাপার। সময় যত যাচ্ছে তত বেশি মানুষের দাম কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে মানবিকতার মূল্য। মানুষ মানুষের জন্য আজ কতটুকু! স্লোগানসর্বস্ব হয়ে পড়েছে গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র।
যে যত বেশি স্লোগান দিতে পারছে, যত বেশি কথায় পাকা, সেই তত সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছে। কবি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ ইসলামে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা গুরুতর অপরাধ। এর শাস্তি হত্যার বদলে হত্যা। বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতার জালে আবদ্ধ। এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসকে বড় অপরাধ মনে করে না। বাংলাদেশে আজও বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পেতে পেতে কয়েক যুগ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই যদি হয় শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বিচার প্রক্রিয়া, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণে আজ আমরা সামাজিকভাবে সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। বিচার প্রক্রিয়ার এই বিলম্বের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্কও বিরাজ করছে।
সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষাকারীকে সব মানুষের জীবন রক্ষাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আয়াতের শেষাংশে উল্লেখ আছে, ‘(অন্যায়ভাবে) যে কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করে, আর যে কারো জীবন রক্ষা করে সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।’
দেশের সব মানুষের হেফাজতের দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়েই সরকার গঠিত হয়। নির্বাচিত সরকারকে অস্থির করে তোলে একদল অপরাধী চক্র। প্রলম্বিত বিচার ব্যবস্থার কারণেই এরা পার পেয়ে যায়। ফলে ন্যায়বিচার পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষের জীবন রক্ষায় কতটুকু কার্যকর ভূমিকা এখন জরুরি তা সহজেই অনুমেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধের শাস্তিটা দ্রুত জরুরি। অপরাধের শাস্তি হলে তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না। সমাজকে সুষ্ঠু ও গতিশীল রাখার জন্য এসব শাস্তির ব্যাপারে প্রশাসনকে যুগান্তকারী ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হতে হবে।
এ দেশের সাধারণ জনগণ বিচার ব্যবস্থা ও এ সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে নিরপেক্ষতা আশা করে। যাদের চোখে হবে সবাই সমান। যাদের কাছে ক্ষমতাবান-ক্ষমতাহীনের কোনো পার্থক্য থাকবে না।
লেখক: পরিচালক, ইকরা বাংলাদেশ হবিগঞ্জ