কী নামে ডাকি তোমায়
মাওলানা সাঈদ কাদির
‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদের বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।’ সুরা আল আরাফ: ১৮০
উপরুল্লিখিত আয়াতে আল্লাহকে ডাকার নিয়ম ও বিধান বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহর জন্য যেসব উত্তম নাম রয়েছে সেসব নামেই তাকে ডাকতে হবে। ‘উত্তম’ বলতে বোঝানো হয়েছে- যা গুণ-বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ স্তরকে চিহ্নিত করে। আর গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সর্বোচ্চ স্তর, যার ঊর্ধ্বে আর কোন স্তর থাকতে পারে না, তা শুধু একমাত্র আল্লাহ জাল্লা শানুহু’র জন্যই নির্দিষ্ট। তাঁকে ছাড়া কোন সৃষ্টির পক্ষে এই স্তরে উন্নিত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, দুনিয়ার মানুষের জ্ঞান-গুণ একজন অপেক্ষা অন্যজনের বেশি হওয়া প্রমাণিত। কুরআনেও বলা হয়েছে ‘প্রত্যেক জ্ঞানীর ওপরেও আছে অধিকতর এক জ্ঞানীজন’। সুরা ইউসুফ: ৭৬
আর আসমায়ে হুসনা সম্পর্কিত উপরুল্লেখিত আয়াতে ‘আসমায়ুল হুসনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, এসব আসমায়ে হুসনা বা উত্তম নামসমূহ একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনেরই বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট লাভ করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আর যখন জানা গেল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য বিশেষ কিছু নাম রয়েছে, এবং সেসমস্ত নাম আল্লাহর সত্তার সাথেই নির্দিষ্ট, কাজেই আল্লাহকে যখন ডাকবে, এসব নামে ডাকাই কর্তব্য।
আয়াতের অপরাংশে বলা হয়েছে, ‘তাদের কথা ছাড়ুন, যারা আল্লাহ তায়ালার আসমায়ে হুসনার ব্যপারে বাঁকা চাল অবলম্বন করে। অচিরেই তারা তাদের কৃত বাঁকামির প্রতিফল পেয়ে যাবে।
অর্থাৎ যারা আল্লাহর নামের প্রকৃত অর্থ ছেড়ে এদিক-সেদিকের বানোয়াট ও ধারণাপ্রসূত অর্থ ও ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ জুড়ে দেয় এবং কুরআনের অর্থ গ্রহণে যুক্তি ও বাঁকা চালের আশ্রয় নেয়, তাদের ব্যপারটা ছেড়ে দেওয়াই কর্তব্য। কারণ, তারা যে বাঁকামি এখন করছে, এর প্রতিফল তারা সময়মতো কড়ায়-গ-ায় পেয়ে যাবে।
আয়াতের মর্ম কথা হলো, হামদ, সানা, গুণ ও প্রশংসাকীর্তন, তাসবিহ-তাহলিলের যোগ্য যেহেতু শুধুমাত্র আল্লাহই এবং বিপদাপদে মুক্তি দান আর প্রয়োজন মেটানোও শুধু তাঁরই ক্ষমতায়। কাজেই যদি প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে হয়, তবে তাঁরই করবে আর নিজের প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য সিদ্ধি কিংবা বিপদমুক্তির জন্য ডাকতে হলে শুধু তাঁকেই ডাকবে, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইবে। আর ডাকার পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁর জন্য নির্ধারিত ‘আসমায়ে হুসনা’ বা উত্তম নামেই ডাকবে।
এ আয়াতের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতিকে দুটি হিদায়াত বা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছেÑ প্রথমত আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্তাই প্রকৃত হামদ-সানা বা বিপদমুক্তি বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ডাকার যোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত তাঁকে ডাকার জন্য মানুষ এমন মুক্ত নয় যে, যেকোনো শব্দে ইচ্ছা ডাকতে থাকবে, বরং আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহপরবশ হয়ে আমাদেরকে সেসব শব্দ সমষ্টিও শিখিয়ে দিয়েছেন যা তাঁর মহত্ব ও মর্যাদার উপযোগী। সেই সাথে এ সমস্ত শব্দেই তাঁকে ডাকার জন্য আমাদের বাধ্য করে দিয়েছেন। যাতে আমরা নিজের মত শব্দ পরিবর্তন না করি। কারণ, আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্যের সব দিক লক্ষ্য রেখে তাঁর মহত্বের উপযোগী শব্দ চয়ন করতে পারা মানুষের সাধ্যের ঊর্ধ্বে। -মায়ারেফুল কুরআন
ইমাম বুখারি ও মুসলিম, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে রেওয়ায়েত করেছেন, রসুলে করিম সা. এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিরানববইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এগুলোকে আয়ত্ত করে নেবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ -বুখারি ২৭৩৬, মুসলিম ২৬৭৭
অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, আল্লাহর এই নিরানববই নাম পাঠান্তে যে উদ্দেশ্যের জন্যই প্রার্থনা করা হয়, তা কবুল হয়।
লেখক: ইমাম ও খতিব, কোনাবাড়ি জামে মসজিদ গাজীপুর।