চীন দেশে ইসলাম এলো যেভাবে
আব্দুল্লাহ আল মাসূম
ইসলামের বহু আগে প্রাচীনকাল থেকেই চীন দেশের সাথে আরবদের যোগাযোগ ছিলো। চীনের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো। বাণিজ্যের সূত্র ধরে বঙ্গসহ উপমহাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আরব বণিকদের জাহাজের যাতায়াত ছিলো।
সাহাবি আবু ওয়াক্কাস রা. এর নেতৃত্বে তিনজন সাহাবি ও কিছু সংখ্যক হাবশি মুসলমানদের একটি প্রচারক দল চীনে গমন করেন। দলের আমির সাহাবি আবু ওয়াক্কাস রাযি. চীনের ক্যান্টন বন্দরে অবস্থান করেন। তার প্রতিষ্ঠিত কোয়ান্টাং মসজিদটি এখনো সমুদ্র তীরে সুউচ্চ মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের অদূরেই তার কবর রয়েছে। বর্তমানে সেই মসজিদটি দাওয়াত ও তাবলিগের মারকায হিসেবে পরিচিত।
অন্য দুজন সাহাবি চীনের উপকূলীয় ফু-কিন প্রদেশের চুয়াংচু বন্দরের নিকটবর্তী লিং পাহাড়ের উপর সমাহিত রয়েছেন। চতুর্থজন সাহাবি চীনের অভ্যন্তরে চলে গিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় চীন মহাদেশে ইসলামের সূচনা।
রাসুলের এই সাহাবিরা চীনে এসে প্রথমে ব্যবসা শুরু করেন। আল্লাহর রাসুলের সাহাবিরা হলেন বিক্রেতা আর চীনা জনগণ ক্রেতা। এভাবে কিছুদিন চলার পর চীনের বড়ো বড়ো শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীগণ চীনের রাজ দরবারে অভিযোগ পেশ করে, আরবের কিছু বণিকদের কারণে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। অচিরেই ব্যবস্থা না নিলে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবো। চীনের রাজ দরবার থেকে আরব বণিকদের বহিষ্কার করার ফরমান জারি করা হলো।
সাথে সাথে পুরো চীনে তোলপাড় শুরু হলো। জনগণ রাজদরবারের এই ফরমান শুনে ফুঁসে উঠলো। তারা আরব বণিকদের বহিষ্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে এলো। চীনের রাজা তো এ অবস্থা অবলোকন করে নড়েচড়ে বসলো। রাজদরবারের বিষ্ময়ের শেষ রইলো না। বিক্ষোভকারীদেরকে তলব করে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো। রাজতদন্ত শুরু হলো। কী কারণে চীনের সাধারণ জনগণ আরব বণিকদের পক্ষাবলম্বন করলো, এর কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে বটে।
অবশেষে জানা গেলো, আগত আরব বণিকদের দৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রভাব, ব্যবসায় সততা, ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রয়, ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, কোনো কারণে মাল ফেরত দিতে চাইলে খুশিমনে তা পূর্ণ মূল্য ফেরত দিয়ে ফেরত নিয়ে নেওয়া ও ভোক্তাদের সাথে আরব বণিকদের সুসম্পর্ক বজায় রাখা ইত্যাদির ফলে চীনের সাধারণ জনগণ এদের প্রতি প্রবলভাবে মুগ্ধ।
অপরদিকে চীনের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি কর্তৃক হঠকারিতা, মজুতদারির সীমাহীনতা, অতিরিক্ত মুনাফার লোভ, ভেজাল পণ্যের সয়লাব, সময়মতো জরুরি পণ্য সরবরাহে ব্যর্থতা ও গ্রাহক কিংবা সাধারণ ক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘবে সচেষ্ট না হওয়ার কারণে তারা এদের প্রতি চরম অতিষ্ঠ।
এ তথ্য উদঘাটিত হওয়ার পর চীনের রাজ দরবারের পক্ষ থেকে আরব বণিকদের বহিষ্কারের ফরমান প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জয় হয় ইসলামের। জয় হয় প্রিয় নবির সাহাবিদের উচ্চমানের আখলাকের। আর এভাবেই চীনে ছড়িয়ে পড়ে ইসলাম।