নিউইয়র্কে সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সেই সময় জেলে দেয়া উচিত ছিলো, তাহলে এগুলো মানুষ মারা যেতো না
জিয়া লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করলো
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা সভায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, মানি লন্ডারিংয়ে সে আমেরিকার কোর্টেই ধরা পড়েছে। এখন বিএনপি এবং জামায়াত সেই অবৈধ অর্থ দিয়ে সরকার বিরোধী লবিং করছে। অপপ্রচার করছে। আপনাদের তাদের অপপ্রচার রুখতে হবে। কারণ আপনারাই আমাদের প্রতিনিধি এবং দেশের রাষ্ট্রদূত। বিএনপি এবং জামায়াতের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন নেই। তাদের কাজই হচ্ছে মানুষ হত্যা, আগুন সন্ত্রাস। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা আগুন সন্ত্রাস করছে, পেট্রলবোমা সন্ত্রাস করেছে। যারা হুকুম দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের মামলাতো হবেই। আবার যারা অর্থ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। মানুষ হত্যার বিচারের জন্য অবশ্যই তাদের বিচার হবে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় (নিউইয়র্ক সময়) ম্যানহাটনের অভিজাত হোটেল গ্র্যান্ডহায়াতের বল রুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠন আয়োজিত সার্বজনীন সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং আশরাফুল হাসান বুলবুলের পরিচালনায় সংবর্ধনায় অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ ছাড়া মঞ্চে দুই পাশে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এবং রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি গত সংসদ নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, খালেদা জিয়া ট্রেন মিস করেছেন। তাকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার ভুলের মাশুল তাকেই দিতে হবে। এখন তারা কেঁদে বেড়াচ্ছে তাদের নাকি স্পেস দেয়া হচ্ছে না। আসলে ঐ সময়ই খালেদা জিয়াকে জেলে দেয়া উচিত ছিলো। তাহলে এতগুলো মানুষ মারা যেতো না, দেশের সম্পদ নষ্ট হতো না। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে বেসরকারি অনেক টিভি দিয়েছি। খালেদা দিয়েছেন ফালুকে। ফালুকে দেয়া মানেই ওটার মালিক খালেদা। এখন অনেক টিভির টক শোর টক টক কথা শুনে কান ঝালাপালা। তারপরেও বলে স্পেস দিচ্ছি না। তিনি বলেন, আমাকে জীনের হুমকি দেয়া হচ্ছে, উৎখাতের হুমকি দেয়া হচ্ছে। হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার চাওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা। সেই কাজ আমরা করে যাচ্ছি। ১০ টাকায় এখন ব্যাংক একাউন্ট করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাঙালি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।
নিউইয়র্ক থেকে এনা জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা সভায় এবার অব্যবস্থাপনা ছিলো চরমে। যা অন্য কোনো সময় দেখা যায়নি। হল ছোট নেয়ার কারণে কয়েক হাজার লোক ঢুকতেই পারেননি। এর জন্য সবাই সভাপতিকেই দায়ী করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে সভা শেষে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে চেয়ার মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার দিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ করা হয় এবং সংবর্ধনা সভার সময় হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের সামনে বিক্ষোভ করে কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন। শত শত বিক্ষোভকারী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেন এবং কালো পতাকা প্রদর্শন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭১-এর পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিলো। পরবর্তীতে বেঈমান- মুনাফেকরা ক্ষমতায় এলো। বেঈমান মোস্তাক তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ক্ষমতা দখল করলো জিয়াউর রহমান। ’৭১ এর পরাজিত শক্তিকে সে ক্ষমতায় বসালো। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার দিলো। সংবিধান রহিত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিলো। যে বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সময় ২২ হাজার মামলা হয়েছিলো এবং ১১ হাজারকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছিলো। জিয়া লাখো শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করলো। তার শাসনামলে ১৯টি ক্যু হয়েছিলো। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর শত শত অফিসারকে হত্যা করলো। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও বন্ধ করে দেয়া হলো। এরশাদও ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের লালন ও পালন করলো, তাদের মন্ত্রী ও এমপি বানালো। খালেদা জিয়াও একই কাজ করলেন। এমন কি ১৯৯৬ সালের ভোট চুরির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদদের সংসদেও নিয়ে আসলেন। তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা জাতির পিতার খুনিদের বিচার কাজ সম্পন্ন করি। এর মধ্যে ২ জন আমেরিকায়, ১ জন কানাডায়। আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদের ফিরিয়ে নিয়ে শাস্তি দেয়ার। তিনি বলেন, কী দুর্ভাগা জাতি আমরা খালেদা জিয়া যুদ্ধারাধীদের মন্ত্রী বানালেন। আল্লাহর বিচার আছে। আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা ১০০টি অঞ্চল করছি। যেখানে বিদেশি এবং প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, যখন খুশি তখন আপনারা মূলধন নিয়ে আসতে পারবেন কিন্তু সুদ আনতে পারবেন না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম