মাসুদ আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান: নিষ্ঠুর বাস্তবতার শিকার হয়ে অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন টঙ্গী টাম্পাকো ফয়েল কারখানার আগুনে দগ্ধ ও তাদের স্বজনরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির পুরোপুরি সুস্থ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা আর ভবিষ্যতের ভাবনা বড় হয়ে আসছে তাদের সামনে। আগুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত, আহত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। দগ্ধদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছে জাহাঙ্গীর মৃধা। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমিনুল, মীর শিপন, জাকির, ইকবাল ও হাসানুল হক মিজু নিউরো সার্জারি বিভাগে রয়েছে। আর অর্থপেডিকস বিভাগে প্রাণ কৃষ্ণ । দগ্ধরা তাদের পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, অগ্নিকা-ের ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অনেকটা সময় লাগবে তাদের। শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ হলেও মানসিক সমস্যরা রয়েছে। অনেকেই তাদের পরিবার-স্বজনদের চিনছে না। মানসিকভাবে স্বাভাবিক হতে এদের কারও কারও অনেক সময় লাগবে বলে মত প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। সরেজমিন ডিএমসিইচএ দেখা গেছে, হাসানুল হক মিজু, তিন ভাই-বোনের ছোট্ট এ ভাইটিই ছিল সংসারের আয়ের কর্তা। সদা চঞ্চল মিজু গত ছয় বছর ধরেই ঢাকায় কাজ করতো। আট মাস আগে কাজ শুরু করে টাম্পাকোতে। কিন্তু গত ১০ সেপ্টেম্বর কারখানার আগুনে পুড়ে গেছে এ তরুণের স্বপ্ন। আহত মিজু এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। চিনতে পারছে না স্বজনদেরও। একই অবস্থা পাইন্টিং বিভাগে কাজ করা আহত মীর শিপনেরও। সেও অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
মীর শিপনের স্ত্রী বলেন, তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কিছুই মনে থাকে না। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সন্তানদের লেখাপড়া খরচ কোথায় থেকে পাব। ধসে পড়া ভবনের মতো আহত শ্রমিকদের স্বপ্নগুলোও যেন এখন ধ্বংসের পথে। চরম এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন স্বজনরা।
হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ডা. উজ্জ্বল সাধু খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, শারীরিক সমস্যা কেটে গেলেও বড় এ দুর্ঘটনার কারণে মানসিক সংকট কাটতে সময় লাগবে। কারণ তাদের চোখের সামনেই আগুনে অনেকে মারা গেছে। সে স্মৃতি ভুলতে একটু সময় লাগবে।
এদিকে, গাজীপুরের টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় অগ্নিকা-ে আহত ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষ, আগামী সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চ আদেশের এ দিন ধার্য করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্টসহ তিনটি বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন এ রিটটি দায়ের করেন। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন