জলরঙের পৃথিবী প্রভুর কারুশিল্প
হুমায়ুন আইয়ুব
পৃথিবী প্রভুর জলরঙে আঁকা। কাব্যময় রূপ সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার সাজে। তারাভরা আকাশ, জোসনাভরা রাত, মাঠে মাঠে ফুল-ফসল, গাছে গাছে ফুল-পাখিদের ডাকাডাকি, বাহারি মুগ্ধতা ও রাঙানো পৃথিবীর শিল্পী মহান আল্লাহ। তিনি জামিল। তিনি রূপময়-রূপবতী। রূপ সৌন্দর্য ও প্রেমের আঁধার। জলের নুপুর ধ্বনি, বাগানবিলাসে বাতাসের সুগন্ধ তারই শিল্পের চিত্রকল্প। কুরআনের বাঙময় অক্ষর উচ্চারণ- সিবগাতাল্লাহি ওয়ামান আহসানু মিনাল্লাহি সিবগা। রঙ বৈচিত্র্যে মহান আল্লাহ থেকে আর কে বেশি সুন্দর? সুরা বাকারা : ১৩৮
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ইন্নাল্লাহা জামিল, ইয়ুহিব্বুল জামাল। মহান রব সুন্দর-নান্দনিক। তিনি রূপ সৌন্দর্য পছন্দ করেন। রূপের পৃথিবীতে প্রভুর কারুশিল্পের শ্রেষ্ঠ উপমা মানুষ। মানবফুল। মানুষের গঠন শৈলি, নির্মাণের আখ্যান বোধ ও বিশ্বাসের স্বতন্ত্র অভিধার আর কোনো উদাহরণ নেই। কুরআনে অক্ষরচিত্র হলো, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি শৈল্পিক অবয়বে। সুন্দরতম গঠনে। সুরা তীন : ৪
মানুষের দেহ গঠন ও অবয়ব সুন্দর। রূপসী। রাঙানো। প্রাণীকুলের মাঝেও আছে সেই রূপের বাহার। তবে মানুষের সৌন্দর্য রূপ ও শিল্পের বোধ আছে অন্য সব প্রাণীতে নেই। সাজের আগ্রহ আছে মানুষের, ময়ূরের নেই। ময়ূর সুন্দর কবিতার মতো। কখনও বেণি পরার আগ্রহ জাগেনি। তবে বেণীপরা তরুণীর বোধ ও বিশ্বাসে আছে রূপের ঢেউ। সৌন্দর্যের কামনা। ডানা ছেড়ে ওড়ে যায় পাখি, তরুণীর মনে দুল দিয়ে যায় রূপের আলপনা। মানুষের স্বভাবজাত এ রূপের বোধকে ইসলাম অনুমোদন করে। উৎসাহিত করে। উত্তর আধুনিক পৃথিবীর নির্মম আবিষ্কার ফ্লাট। মানুষ বসবাসের জীবন্ত কবর। শৌখিন মানুষরা ফ্লাট বাড়িতে একুরিয়ামের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। একুরিয়োমে খেলে যায় নানা প্রজাতির মাছ। মাছের সাঁতার। রঙবৈচিত্র্য ও মাছের ভেসে বেড়ানো মুগ্ধ করে আমাদের। শহরিদের। জীবনের এ শৌখিনতা ও নান্দনিকতা ইসলাম অনুমোদিত। একুরিয়াম পোষতে কোনো বাধা নেই ইসলামে। তবে একুরিয়ামে মাছ পালা, পাখি পোষা, গরু ছাগল পালন, হাঁস-মুরগি পালন, বিড়াল পালা, কবুতর পোষা ইত্যাদি বেলায় সজাগ থাকতে হবে আমাদের। ওদের কষ্ট হয়, অবাধ স্বাধীনতা ক্ষুণœ হয়, খাবার-জীবনযাপনে কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। পশুকে গালাগালি ও মাত্রাতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে খাবারের বেলায় হাদিসে এসেছে, হজরত ইবনে ওমর সূত্রে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, একজন নারীকে এ কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে যে, সে বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। বিড়ালটি ক্ষুধার তাড়নায় মারা গেছে। নারী বিড়ালকে খেতেও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি। ছেড়ে দিলে হয়ত সে নিজের খাবার সংগ্রহ করতো। বুখারি-মুসলিম
হাদিসগ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে নবীজি (সা.) একটি গাধার মুখে দাগ দেখতে পেলেন। নবীজি উপস্থিত লোকদের বললেন, তোমরা কি জানো, আমি এমন সব মানুষদের প্রচ- ঘৃণা ও ভর্ৎসনা করি, যারা জীবজন্তুর চেহায়ায় আঘাত করে। দাগ দেয়। একুরিয়ামে মাছের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাধা নেই তবে পরিচর্যা প্রয়োজন। মাছের নিয়মিত খাবার, পানি বদল অবশ্যক। ফ্লাট জীবনের কল্যাণে একুরিয়াম সৌন্দর্য আমাদের জীবনে বয়ে আনুক মানবিকতার ছবি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম