ইসি গঠনে আইন হয়নি ৪৪ বছরেও
দেলওয়ার হোসাইন: সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন করার বিধান থাকলেও ৪৪ বছরে তা করা হয়নি। ১৯৯০, ১৯৯৬ ও ২০০৭ সালের নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এর আগে-পরে ক্ষমতাসীন দলগুলো দলীয় বিবেচনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে।
সর্বশেষ ২০১২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হয় বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এরপরও বর্তমান কমিশনকে নিয়ে হয়েছে বিতর্ক। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা। এবারও আইন তৈরি না করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগের আভাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে নতুন কমিশন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী আইন হলে বিতর্ক অনেক কমবে। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে তা দূর করতেই আইন প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমে যারা কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাবে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। তিনি বলেন, আমরা তো শেষ প্রক্রিয়াও দেখলাম। আবারও যদি সেই প্রক্রিয়ায় তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে কী হবেÑ তা আমরা সবাই বুঝি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদিন মালিক বলেন, কোনো সরকারই আইন করে ও আইন মেনে কাজ করতে চায় না। তাই গত ৪৪ বছরেও কোনো সরকার এই আইনটি করেনি। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনে পছন্দের লোক বসাতে চায়। তিনি বলেন, গত সার্চ কমিটি যে অথর্ব, অদক্ষ ইসি নিয়োগ দিতে পেরেছে এজন্য পুরস্কার দেওয়া উচিত। তবে সরকার যদি আবারও আজ্ঞাবহ কমিশন গঠন করতে চায় তাহলে সেভাবেই কাজ করবে। তবে আজ্ঞাবহ কমিশন না করার কোনো কারণ নেই। ফলে আগামী কমিশনের পারদর্শিতা ও স্বাধীনতা নিয়ে আমি মোটেও আশাবাদী নই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যেহেতু সংবিধানে আছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন তৈরি করতে হবে। তাই আইন ছাড়া আবার কমিশন গঠন করা হলে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ১৯৭২ সাল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করে ইসি গঠন করা হচ্ছে। কোনো সরকারই আইন মানতে চায় না। আর সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করে অতীতে লাভ হয়নি। ভবিষ্যতেও লাভ হবে না।
ইসি এর আগে দুই দফায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে তাগিদ দেয়। ইসি আইনের খসড়াও তৈরি করে দেয়। প্রথম প্রস্তাবটি পাঠানো হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষের দিকে ২০০৮ সালে। সর্বশেষ প্রস্তাব পাঠানো হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১১ সালের আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও এ আইন করার জন্য আইন কমিশনকে তাগিদ দেয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় বা আইন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সবশেষে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আরও একটি প্রস্তাব তৈরি করে। এই প্রস্তাবে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন, ২০১১ এর খসড়ায় বলা হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্ভাব্যদের একটি প্যানেল তৈরি করবে অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি)। ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে পাঠাবে। পরে তা সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটি (সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে) পরীক্ষা করে বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। উপদেষ্টা কমিটির চূড়ান্ত প্যানেল থেকে যেকোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তবে খসড়া আইন তৈরির পর এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি।