থার্ড ক্যারিয়ারে হজযাত্রী পরিবহন করা যাবে : হাব সভাপতি খালেদা-তারেক দুবাই পর্যন্ত একসঙ্গে ফিরলেন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার সময় দুবাই থেকে একসঙ্গে যেতে না পারলেও ফেরার সময়ে দুবাই পর্যন্ত একসঙ্গে ফিরেছেন। সেখানে খালেদা জিয়া তারেক রহমানকে ও তার পরিবারের সদস্যদের ও কোকোর স্ত্রীকে বিদায় জানান। তারা লন্ডনের উদ্দেশ্যে দুবাই ছাড়ার পর এমিরেটসের অন্য একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে দুবাই ছাড়েন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানান, তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে গেলেও ফেরার পর সৌদি বাদশার তরফ থেকে তার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের জন্য এমিরেটসের টিকিট দেওয়া হয়। ফেরার সময়ও সৌদি বাদশার তরফ থেকে এমিরেটসের টিকিট দেওয়ার কথা হয়েছিলো কিন্তু পাওয়া যায়নি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছর ধরেই নিয়ম করা হয়েছে হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবেন কেবল ফার্স্ট ক্যারিয়ার কিংবা সেকেন্ড ক্যারিয়ার। ফার্স্ট ক্যারিয়ার হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আর সেকেন্ড ক্যারিয়ার হচ্ছে সৌদি এয়ারলাইন্স। এর বাইরে কোনো হজযাত্রী অন্য এয়ারলাইন্সে যেতে পারবেন না। এটা কোনো এয়ারলাইন্সও করতে পারবেন না। এই সংক্রান্ত চুক্তিও আছে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের। এই কারণে সব হজযাত্রীকে দুটির একটিতে যেতে হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এই কারণে যাওয়ার সময়ে এমিরেটসে যেতে পারেননি। ফেরার সময়ে ফিরতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় যে, সিডিউল অনুযায়ী কোনো একজন যাত্রীর যে সময়ে ফেরার কথা এর চেয়ে আগেই তাকে দেশে ফিরতে হবে, সেই জন্য তিনি অন্য একটি ক্যারিয়ারের টিকিট নিতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে তিনি যে এয়ারলাইন্সে যাবেন সেই এয়ারলাইন্সের একটি ফিরতে টিকিট কিনতে হবে। ফিরতি টিকিট কেনার পর তিনি সেটা ব্যবহার না করলেও ওই টাকা আর ফেরত পাবেন না।
এই ব্যাপারে হজ এজেন্সি অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, আগে থার্ড ক্যারিয়ারে হজ যাত্রীরা যেতে পারতেন। কিন্তু গত পাঁচ/ছয় বছর ধরে পারছেন না। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সরকার নিয়ম করেছে প্রথম ও দ্বিতীয় ক্যারিয়ার ছাড়া অন্যকোনো এযারলাইন্সে হজযাত্রী যাওয়ার সময়ে যেতে পারবেন না। এই কারণে এখন যারাই যাচ্ছেন তাদেরকে ওই দুটির একটিতে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা থার্ড ক্যারিয়ারে হজযাত্রী পাঠানোর জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না সরকার থেকে। তিনি বলেন, থার্ড ক্যারিয়ারে যাতে আমরা হজযাত্রী পাঠাতে পারি এই জন্য ২০০৯ সালেও মামলাও করেছিলাম। তখন আমাদের আবেদন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিলো। এরপর যখন স্থগিতাদেশ স্থগিত করা হয়, এরপর আদালত আদেশ দেয় থার্ড ক্যারিয়ারে হজযাত্রী পরিবহন করা যাবে। কিন্তু আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও আমরা হজযাত্রী থার্ড ক্যারিয়ারে পাঠাতে পারছি না। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকেও এই জন্য এমিরেটসে যেতে দেওয়া হয়নি। সৌদি এয়ারলাইন্সে যেতে হয়েছে। তবে যাওয়ার সময়ে কড়াকড়ি করার সুযোগ থাকলেও ফেরার পথে তা সম্ভব হয় না। কারণ হজযাত্রীরা টাকা জমা দেওয়ার সময় ফিরতি একটি টিকিটের টাকা জমা দেন। কিন্তু কারো জরুরি প্রয়োজন হলে তিনি ফেরার পথে টিকিটের টাকা ফেরত পাবেন না, তবে অন্য ক্যারিয়ারের আলাদা টিকিট কিনে এরপর আসতে পারবেন। সেইভাবেই তিনি আসেন। তিনি বলেন, মূলতঃ হজযাত্রী পরিবহন করে টাকাটা যাতে দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন দুটি ক্যারিয়ার টাকা পায় এই জন্য এই নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করে দিলে এখন যাত্রীদের যে ভোগান্তি হয় তা হতো না। এছাড়াও যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সময়ে ফ্লাইটের টিকিট করা সম্ভব হতো।
সূত্র জানায়, যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবে পৌঁছাতে চান। কিন্তু নিয়ম নেই বলে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে দেশ থেকে বের হতে দিবে না এই কারণে ওই এয়ারলাইন্সের টিকিট নিতে পারেননি। পরে তার হজে যাওয়া অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় সৌদি এয়ারলাইন্সেই যান। কিন্তু তিনি ফেরার পথে এমিরেটসের এয়ারলাইন্সে আসার সিদ্ধান্ত নেন সেই জন্য তার দেশে ফেরার দিন পেছান। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি দেশে ফিরেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম