
বৈরিতায় আসবে না কাশ্মীরের সমাধান
নূসরাত জাহান: ভারত সরকার কড়া ভাষায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ও পাকিস্তানকে এক হাত নিতে প্রস্তুত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈরিতা, বিবাদ দিয়ে কাশ্মীর সংকটের সমাধান হবে না। এতে আরও সংকট ঘণীভূত হবে।
উরি কা-ের পর ভারতীয়রা চাইছে তাদের সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করুক। তবে পররাষ্ট্র নীতি যে আবেগে চলে না তা নরেন্দ্র মোদির সরকার বেশ ভালভাবেই জানে। ভারত খুব বেশি হলে সেনা পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলো ভেঙে দিতে পারে। অথবা করাচি বন্দরকে ঘিরে ফেলতে পারে। কিংবা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমানহামলা চালাতে পারে। তবে এর বেশি কিছু করার ফল ভালো হবে না।
জাতিসংঘের মাধ্যমে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে করার চেষ্টা চালাতে পারে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ, জাপান বা পশ্চিম এশিয়ার কিছু মিত্র রাষ্ট্রকে নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ পথটি বাস্তবসম্মত হলেও তাতে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর পাকিস্তানকে কঠোর শাস্তি দিতে আগ্রহী ভারতীরা এত সময় অপেক্ষা করতে রাজি নয়।
সামরিক নীতি প্রণয়নে ভারতের কোনো রকম আবেগ দেখালে হবে না। কারণ সামান্য ভুল হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পাকিস্তানে হামলা করলে তারা তো বসে থাকবে না। তারাও পাল্টা জবাব দেবে। সেটাই স্বাভাবিক। ভারতবিরোধীরাও তাই চায়। পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে এগোলে পাকিস্তান বহির্বিশ্বকে দেখাবে কে প্রথমে আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়েছে। তাতে আখেরে লাভবান পাকিস্তানই হবে। তাছাড়া উন্নত অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের বড় শক্তি হিসেবে স্বীকৃত ভারত যুদ্ধে গেলে তা নিজের পায়ে কুড়াল মারারই সামিল।
এছাড়া ২০১৬ সালে বসে পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানকে নিমেষেই পরাজিত করা যাবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। দুটি দেশের সামরিক শক্তি এখন সমান। অন্তত প্রকাশিত তথ্য তাই বলছে।
কাশ্মীরে গত কয়েকমাস ধরে যে অশান্তি চলছে তাতে ভারতের সমস্যা বেড়েছে বৈ কমেনি। আর এ মুহূর্তে পাকিস্তান চাইবে কাশ্মীরি জনগণের ‘পক্ষে’ লড়াই করার। যাতে মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা পাওয়া যায়। এরপর যদি ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায় তাহলে তা সংকট আরও বাড়বে।
তাই কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে পারে ভারত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ মুহূর্তে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই ইসলামাবাদ। ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বা আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কে বেশ টানাপড়েন চলছে। দিল্লিকে এ সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াতে হবে মোদিকে। যাতে পাকিস্তানকে চাপে রাখা যায়।
দ্বিতীয়ত, দিল্লিকে নিজের প্রতিরক্ষা দৃঢ় করতে হবে। সামরিক শক্তি বলতে শুধু ‘অফেন্স’ নয়, ‘ডিফেন্স’ও বোঝায়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা বা এ বছরের শুরুতে পাঠানকোটে হামলা প্রমাণ করে ভারতে প্রতিরক্ষার অবস্থা কী।
তৃতীয়ত, কাশ্মীরের পরিবর্তে বেলুচিস্তানকে হাতিয়ার করতে হবে ভারতকে। তাহলেই প্রতিপক্ষ বুঝবে ইট ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়। এতে পাকিস্তানের জিহাদি মনোভাব হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হবে না। তবে তাদের সেনাবাহিনীর উপর বাড়তি চাপ পড়বে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদারের ব্যাপারে।
এখন ভারত সরকার কোন নীতি নেবে সেটাই দেখার বিষয়। ভালো অবস্থানে থাকতে হলে অবশ্যই যুদ্ধের মানসিকতা ছাড়তে হবে। যুদ্ধ ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। তাতে বিপদ আরও বাড়ার সম্ভাবনাই রয়েছে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।
