কৃষ্ণ কান্ত বৈরাগী
পরমেশ্বর ভগবান সম্পর্কে মানুষের ধারণা গ্রামের তিন ব্যক্তির শহরে এসে ট্রেন দর্শনের মতো। কারও মতে, পরমেশ্বর ভগবান নির্বিশেষ বা নিরাকার অথবা একটি জ্যোতি মাত্র, তিনি কখনও আকার ধারণ করতে পারেন না। তাই পৃথিবীতে তার জন্ম অসম্ভব। কেউ আবার ভগবানকে পরমাত্মা রূপে উপাসনা করেন এবং তিনি প্রতিটি জীবের হৃদয়ে আত্মারুপে বিরাজমান। কারও মতে, পরমেশ্বর ভগবান সবিশেষ বা সাকার। অর্থাৎ ঈশ্বরকে তিনভাবে উপলব্ধি করা যায়Ñ নির্বিশেষ বা নিরাকার ব্রহ্ম, পরমাত্মা এবং সবিশেষ বা সাকার রূপে।
ঈশ্বরের পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া বা জন্মগ্রহণ করাকে যারা অসম্ভব বলে মনে করেন তাদের কাছে প্রশ্ন হতে পারেÑ যিনি সর্বশক্তিমান, যিনি সকল সৃষ্টির স্রষ্টা, তিনি কেন শরীর ধারণ করতে পারবেন না? যদি তার সেই ক্ষমতা না-ই থাকে তবে তিনি কিভাবে সর্বশক্তিমান বলে জগতে কৃতিত্ব হন? বরং তিনি ইচ্ছানুযায়ী জীব, জড়, অগ্নি, বায়ু, জল কিংবা অন্য যেকোনোভাবেই হোক না কেন জগতে আসতে পারেন, অবস্থান করতে পারেন, ইচ্ছাপূরণ করতে পারেন তাইতো তিনি সর্বশক্তিমান। অনেকে বলতে পারেন ভগবানের ইচ্ছামাত্রই সবকিছু সম্পাদিত হয়ে যায় তাই তার পৃথিবীতে আসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এদের অনেকেই বিশ্বাস করেন তিনি পুত্ররূপে, বন্ধুরূপে, গুরুরূপে কিংবা অন্যকোনোভাবে জগতে প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। দেখা যায়, পৃথিবীতে যত মত-পথ আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির পেছনেই এক বা একাধিক দ্রষ্টা বা প্রবর্তক রয়েছেন। যারা এ সকল মত-পথের অনুসারী তারা বিশ্বাস করেন ওই সকল প্রবর্তক ঈশ্বরের বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি যাদের সুপারিশ পর্যন্ত ঈশ্বর বিবেচনা করবেন। ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য পরমেশ্বর ভগবানের পৃথিবীতে আসার প্রয়োজন নেই এই যুক্তি যারা দেখান তারা তো প্রতিনিধি পাঠানোয় বিশ্বাস করতে পারেন না।
আসলে সৃষ্টির কল্যাণের জন্য স্রষ্টা যেমন প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারেন তেমনি তিনি স্বয়ং অবতরণ করতে পারেন। আর পরমেশ্বর ভগবান তার সৃষ্টির মাঝে আসবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। সন্তান বিপদে পড়লে যেমন মাতা-পিতা সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন তেমনি পরম ভক্তকে রক্ষা করতে ভগবানও এগিয়ে আসেন। শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘যখনই ধর্মের গ্লানি হয়, অধর্মের অভ্যুত্থান হয় তখনই দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করে সাধুদের পরিত্রাণ, ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।’ পরমেশ্বর ভগবান পরম করুণাময়। বিপথগামী মোহবদ্ধ জীবদের পরমধর্ম শিক্ষাদানের মাধ্যমে এ মায়া-মোহময় জগত থেকে উদ্ধারের জন্য পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।