কুশীনগর অবধিও সে দিন আসতে পারছিলেন না তিনি, হিরণাবতী নদীর তীরে গাছের নিচে বসে পড়েছিল আশি বছরের অশক্ত শরীর। শিষ্য আনন্দ জল নিয়ে আসার পর বললেন, কুশীনারার মল্লদের খবর দাও। রাতে সুগত মহাপরিনির্বাণে যাবেন। কিন্তু কুশীনগরের সামান্য শালবন! সে কি হতে পারে তথাগতর মহাপরিনির্বাণের যোগ্য স্থান? আনন্দ বললেন, রাজগৃহ, কোশাম্বী, শ্রাবস্তীর মতো ছটি মহানগর কাছাকাছিই রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ বললেন, অতীতে শালজঙ্গলের এই কুশীনগর ছিল সমৃদ্ধ এক ধনাঢ্য রাজ্য। এর আগে সাত জন্মে তিনি পরিনির্বাণের জন্য এই জায়গাটি বেছে নিয়েছিলেন। এ বারেও তার ব্যত্যয় হবে না। শিষ্যরা বুঝে গেলেন, আজ যা মহানগর, আগামী কাল তা-ই হতে পারে পরিত্যক্ত জঙ্গল। জগতে কিছুই নয় শাশ্বত সত্য।
তার শেষ উপদেশও এই রকম। আনন্দরা প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার শেষ উপদেশ? তথাগত হেসে বলেছিলেন, ‘সবই জানিয়েছি। আমি কি সেই রকম শিক্ষক আনন্দ, যে অন্যদের তত্ত্ব না জানিয়ে নিজের মুঠোয় লুকিয়ে রাখব?’ রসিকতাবোধে তিনি বরাবরই উজ্জ্বল। দুই তরুণ শ্রমণ একবার তাকে এসে জানাল, ভিক্ষা নিতে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণরা তাদের খুব গালি দিচ্ছে। যে ব্রাহ্মণ ব্রহ্মার মুখ থেকে সৃষ্ট, তারা সেই ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেও বংশের মুখে কালি দিয়ে শ্রমণ গোতমের সংঘে ঢুকেছে! সব শুনে তথাগতের উত্তর, ‘সে কী! ব্রহ্মার মুখ থেকে? তুমি জানো না, ওরা নারীর গর্ভে জন্মায়! রজস্বলা হয়, গর্ভবতী হয়, সন্তানের জন্ম দেয় এবং অসুস্থ হয় এমন নারী!’