ঘানায় মহাত্মা গান্ধীর বিরুদ্ধে আন্দোলন!
অনির্বাণ বড়ুয়া : নেলসন ম্যান্ডেলা এক সময় বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধীর নীতি ও কৌশল তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিবিদ্বেষ কাটিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। ইথিওপিয়ার বাদশাহ হেইলি সেলাসি বলেছিলেন, ‘যতদিন স্বাধীন, স্বাধীনতাকামী মানুষ ও ন্যায়বিচার টিকে থাকবে ততদিন মহাত্মা গান্ধী সবার হৃদয়ে থাকবে।’ তবে সব আফ্রিকান নেতারা ভারতের জাতির পিতাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না। অনেকে তাকে বর্ণবাদী ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল বলেও আখ্যা দেন।
বিতর্কের শুরু চলতি বছরের জুলাইয়ে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ইউনিভার্সিটি অব ঘানায় একটি ভাষ্কর্য উন্মোচন করেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব ঘানাকে মহাত্মা গান্ধীর একটি মূর্তি উপহার দিলে দেশটির সরকার ঘানার রাজধানী আক্রায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ঘানার প্রাঙ্গণে স্থাপণ করে। এর পর থেকে এই মূর্তিকে নামিয়ে ফেলার জন্য নানান ধরনের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা। তাদের যুক্তি মহাত্মা গান্ধী তার লেখায় আফ্রিকানদের ‘অসভ্য বা স্থাণীয় আফ্রিকান’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি নাকি আফ্রিকানদের বর্ণবাদী একটি বিদ্রুপাত্মক শব্দ ‘কাফফিরস’ও ব্যবহার করেছিলেন।
মূর্তিটি নামিয়ে ফেলার জন্য দাবি উঠেছে বুদ্ধিজীবী সমাজের তরফ থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন অধ্যাপক চেঞ্জ ডট অর্গে একটি পিটিশন শুরু করেন যেটির শিরোনাম ‘ইউনিভার্সিটি অব ঘানার গান্ধীর মূর্তিটি অবশ্যই নামিয়ে ফেলতে হবে’। এই পিটিশনে ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজার ২০০ জন স্বাক্ষর করেছে। পিটিশনে বলা হয়, ‘ইতিহাসবিধরা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি গান্ধীর অসহানুভূতিশীল আচরণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এবং উপরন্তু আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মূর্তি স্থাপণ করে তাকে সম্মান দিচ্ছি?’
এরই মধ্যে গান্ধী মাস্ট কাম ডাউন হ্যাশট্যাগে অধ্যাপকদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা।
ড্যানিয়েল ওসেই টুফর, যিনি ইউনিভার্সিটি অব ঘানার একজন সাবেক ছাত্র তিনিও এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেন। তিনি বলেন, ‘ঘানাকে নিজেদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং নিজেদের নায়কদের দেখতে হবে। গান্ধীর কর্মকা-ে কোনও শান্তিপূর্ণ কিছু ছিলো না। যারা শান্তির কথা বলে বর্ণবাদ ও ভ-ামিকে উৎসাহ দেয় তাদের মধ্যে নায়কোচিত কিছু নেই।’
কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি গান্ধীর আচরণ নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। মহাত্মা গান্ধীর নাতি রাজমোহন গান্ধী যিনি মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী লিখেছিলেন তিনি বলেন, ২৪ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় যান তখন তিনি আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান রাখতেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘গান্ধী নিজেও ত্রুটিপূর্ণ মানুষ ছিলেন… সেই ত্রুটপূর্ণ মানুষটিই ওই সময়ে তার স্বদেশীদের চেয়ে বেশি মৌলবাদী ও প্রগতিশীল ছিলেন।’ এফএ/ সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ
ড. ওবাদেল কামবন যিনি পিটিশন চালুকারীদের একজন, তিনি বলেন, এই জায়গায় ও অন্যান্য জায়গায় আদর্শগত কারণে আফ্রিকান নায়কদের প্রতিমূর্তি স্থাপন করা দরকার যা নিজেদের সম্পর্কে জ্ঞান, আত্ম-সম্মান ও নিজেদের ভালোবাসার শিক্ষা দেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘দিনের শেষে আমাদের নিজেদের মানসিক বিকাশের জন্য নিজেদেরকেই চিত্রায়ন করতে হবে। এমন কাউকে নয় যে আমাদের অসভ্য বলেছিলো… গান্ধীর যেন পতন হয় ও আফ্রিকা উঠে দাঁড়ায়।’