ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হচ্ছে আরও ৩৬টি ওয়ার্ড
ফয়সাল খান: ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নতুন সংযুক্ত ১৬ ইউনিয়নকে ৩৬ ওয়ার্ড এবং ৬টি অঞ্চল করার পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) থাকা ৩৬টি ওয়ার্ড ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ৫৭টি ওয়ার্ডের সঙ্গে নতুন ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত হচ্ছে। গত ৯ মে প্রাশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএনসিসিতে ৮টি এবং ডিএসসিসিতে ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত করার পর দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এসব অঞ্চলে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা করে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নতুন করে ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত করা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সিটি কর্পোরেশনের আলোচনা চলছে। তবে এর সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। কোন ইউনিয়ন কোন ওয়ার্ড বা কোন জোনের সঙ্গে থাকবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। কমিটিতে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিও রয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান করার কথা জানিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বুয়েটের শিক্ষকদের নিয়ে কয়েকদিন আগে আলোচনা করেছি। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ডিএনসিসির প্রকৌশলীগণ এসব ইউনিয়নের রাস্তা, বিদ্যুৎ, ড্রেনেজ সমস্যা, মাঠ, পার্কসহ বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কিত সব তথ্য সংগ্রহে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে আটটি ইউনিয়নকে নাগরিক সেবা প্রদানের স্বার্থে ৩টি আঞ্চলিক অফিস ও ১৮টি ওয়ার্ড করার পরিকল্পনার কথা জানালেও এসব বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান আনিসুল হক।
রাজধানীতে নতুন ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় ঢাকার আয়তন প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। সংযুক্ত এসব ইউনিয়নসহ রাজধানীর আয়তন বেড়ে ২৭০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। যা আগে ১২৯ বর্গকিলোমিটার ছিল। ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে এ দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ৮১ লাখ ৮৪ হাজার ৪১ জন। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
এসব ইউপিতে উন্নত পর্যায়ের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ড্রেনেজ, গ্যাসলাইন, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা ও রাস্তার জন্য তৈরি করা হচ্ছে প্ল্যান। শিগগিরই এসব এলাকার রাস্তায় বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বেলাল। তিনি বলেন, মেয়রের নির্দেশে নাগরিকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য সংগ্রহে আমাদের বিভিন্ন দফতরকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী।
দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, নতুন অঞ্চল, ওয়ার্ড ও প্রতিটি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা, ওয়ার্ড কার্যালয়, এলাকা পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা, ট্রেড লাইসেন্সসহ একাধিক বিষয়াদিও সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উভয় সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। এছাড়া নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে দ্রুত বৈঠকে বসার চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্বব্যাংকসহ বেশকটি দাতাসংস্থা এসব এলাকার উন্নয়নে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া ৮ ইউনিয়ন হলোÑ বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি (খিলক্ষেত)। ঢাকা দক্ষিণে যুক্ত হওয়া ৮ ইউনিয়ন হলো শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম