‘সময় মতো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’ মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এমন কি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে? তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সময় মতো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের খবর কি যমুনা নদীর স্রোতে ভেসে এসেছে। এমন কি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে?
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলবৎ আছে। বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যাতে কোনো মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
সাধারণ পরিষদের ‘৭১তম অধিবেশনে অংশ গ্রহণকে সফল এবং ফলপ্রসূ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে। এই অধিবেশনে আমরা বাংলাদেশের এজেন্ডাগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।
আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন ও কাউন্সিলের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এটা আমাদের রুটিন কাজ এবং প্রতি ৩ বছরেই দলীয় কাউন্সিল হয়।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তৃণমূল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলায় দলের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (দলের) অনুষ্ঠিত হবে এবং এই কাউন্সিলররা নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জরুরি অবস্থায় এবং সামরিক শাসনামলে দলের কাউন্সিল হয়নি। তিনি বলেন, কিন্তু অন্য সময় আমরা নিয়মিত দলীয় কাউন্সিল করার চেষ্টা করেছি ।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপি ও কতিপয় অন্য দলের বিরোধিতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলের প্রবণতা হচ্ছে প্রতিটি কাজের বিরোধিতা করা এবং এ ব্যাপারে ভয়ের কিছু নেই। সংসদে বিরোধীদল যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বিশেষ করে যারা সংসদে নেই এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গত সাধারণ নির্বাচন বানচাল করতে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে এবং একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু আশা করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছে। কিন্তু গত নির্বাচন বানচালে তারা তাদের প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি কারণে এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরমধ্যে ইউরোপে চলমান শরণার্থী সংকট ও অভিভাসন সমস্যাসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর লাখ লাখ আশ্রয় প্রতাশীদের সমস্যা, মধ্যপ্রাচ্যে আইএস’সহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গি তৎপরতার উত্থান এবং পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ‘প্যারিস ক্লাইমেট ডিল’ অনুসমর্থনের বিষয়টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্বলিত ‘২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’-এর চূড়ান্ত অনুমোদনসহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুসমর্থনের বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট থাকা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ পরিষদের বিতর্ক অধিবেশনে আমি প্রতিবারের মত এবারেও মাতৃভাষা বাংলায় বক্তব্য রাখি। আমার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন সংকট, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরি।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনর্ব্যক্ত করি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসীদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদতদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অত্যন্ত জোরালো বলে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী।
কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম