ইসলামে বন রক্ষা ও পরিচর্যা
হুমায়ুন আইয়ুব
বন মরে যাচ্ছে। প্রকৃতি মরে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে পরিবেশ। আমাদের পরিবেশ ছিল মিষ্টি মেয়ের মতো কত রূপসী। চোখ জুড়ানো মন ভুলানো সবুজের ছবি আঁকা রঙিন পরিবেশ। চারদিকে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো কত গাছ। বিশাল আকৃতির চেনা অচেনা বৃক্ষ। গ্রামে গ্রামে বন জঙ্গলের কি যে এক মজার ভুবন।
এখন আর ওসব নেই। অবুঝের মতো গাছ কেটে যাচ্ছে মানুষ। আর কেঁদে যাচ্ছে গাছেরা। কাঁদে পাখি, কাঁদে গাছ, কাঁদে হাজারো কীট-পতঙ্গ। কুরআনের ভাষ্য-আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে। (সুরা হাশর-২৪)
পরিবেশের যতেœ কুরআন বলছে, তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাকারা : ২৯)। কুরআন আরও বলছে, তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ভূমি। আমি একে সঞ্জিবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্ণা। যাতে তারা ফল পায়। (সূরা ইয়াসিন : ৩৩)
প্রকৃতির প্রেম শিখাতে কুরআন আরও বলছে, যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভ’মিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ করে দিয়েছেন আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল ফসল উৎপন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে। (সূরা বাকারা : ২২)
গাছ কাটলে গাছের জিকির বন্ধ হয়ে যায়। সে জিকিরের ধ্বনি আমরা নিজ কানে শুনি না। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেনÑ তোমরা তাদের তসবিহ শোনো না, বুঝও না।
গাছের পাতায় পাতায় সবুজের রঙ্গে আঁকা আল্লাহর ছবি। ঐশি তুলিতে গাছের ডালায় ডালায় লেখা আল্লাহর নাম। ভিনদেশি কবির ভাষ্যÑওহে প্রভু যে দিকে তাকাই প্রকৃতির রঙ-তুলিতে তুমি আল্লাহর ছবি। প্রকৃতির তরুলতায় পত্র-পল্লবে তোমার রবের রবি।
আমাদের মনে রক্ত বয়ে যায় যখন আকুতি করে গাছেরা। আকুতি করে না কাটার জন্য। আবেদন জানায় বেঁচে থাকার, আল্লাহকে ডাকার। কিন্তু নিষ্ঠুরেরা শোনে না কথা। বুঝে না গাছের ভাষা। বনের ভাষা। পৌঁছে না কানে নীরব কান্নার সুর। গাছ নিজে রোদে পুড়ে ছায়া দেয় মানুষকে। বৃষ্টিতে ভিজে ফল পাকায়, ফল খাওয়ায় আদমকে। সবশেষে আগুনে পুড়ে জ্বালানি হয় গৃহিণীর চুলার। তবু মানুষ গাছ কাটে। বনের পর বন উজাড় করে। মরুর প্রান্তরে রুক্ষ বালির সাগরে জন্ম নেয়া নবীজীর হৃদয়ে গাছগাছালির প্রতি কত দরদ ছিল। খেজুর গাছের পাতা ছিল মায়ার চাদর। পুষ্পকলির ছিটেফোঁটা মনের আতর। বৃক্ষের সুশোভিত পরিবেশে হৃদয়ের বিছানা। মানুষের বন্ধু বৃক্ষ, বৃক্ষের বন্ধু মানুষ। তাই তো বৃক্ষ প্রেমিক নবী বলেনÑ তুমি গাছ লাগাতে গিয়ে যদি কেয়ামত এসে গেছে দেখো তবুও গাছটি রোপণ করবে।
আমাদের নিজ দায়িত্বে গাছ লাগাতে হবে। গাছ রোপণ করে পরিবেশ সুশোভন করতে হবে। স্বচ্ছ সুন্দর ও নির্মল পরিবেশের জন্য গাছের বিকল্প নেই। মানুষের জীবনে হরেক রকম চাহিদা নিশ্চিত করতেও গাছের দরকার। বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ঘর-বাড়ি, বই খাতা কলম ও চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরিতে গাছের কোনো জুড়ি নেই। দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়ে, কাক, বুলবুলিসহ পশুকুল গাছের উপর নিভর্রশীল। ওদের জীবন চলে গাছে। ওদের খাদ্য গাছে। গাছে ওদের সংসার। তেমনি মানুষের জীবন-স্বপ্নের অনেক কিছুই গাছ নির্ভর।
সবাই মিলে গাছ লাগাই আর শুনি নবী-সাহাবির একটি গল্প। হযরত আবু দরদা (রা.) রাসুল (সা.) এর খুব প্রিয় সাহাবি। দামেস্কে বসবাস করেন। তখন একদিন হাতে টিপে ইটমাটি ভাঙছেন। গাছ লাগাচ্ছেন বড় যতœ করে। হেঁটে যাওয়া একজন আঁতকে উঠলেন। সাহাবির গাছ লাগানো দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এত যতœ করে গাছ লাগাচ্ছেন কেন? আপনি নবীজীর ঘনিষ্ঠ সাহাবি! আবু দরদা বললেন, দয়া করে এমনটি বলবেন না। আমি খুব কাছ থেকে শুনেছি, নবী বলেনÑ কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা ফসল ফলায় এবং তা থেকে কোনো মানুষ জীব-জন্তু ও পশু-পাখি আহার করে তাহলে সবার আহারের অংশের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে অশেষ সওয়াব দান করবেন।
পরিবেশ নষ্ট না করতে মহানবীর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তোমরা অভিশপ্ত তিন প্রকার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখো। ১.পানির উৎসসমূহে ২. রাস্তা-ঘাটে ও বৃক্ষের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা। পরিবেশবান্ধব মহানবী জীবন গল্পে পাওয়া যায়, একজন লোক যখন অকারণে একটি গাছের ডাল ভাঙে তখন নবীজী (সা.) সে লোকটির চুল মৃদুভাবে টান দিয়ে বলেন, তুমি যেমন শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে ব্যথা পাও, গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে গাছও তেমন ব্যথা পায়।
নবীজী আরও বলেছেন, বৃক্ষরোপণ করলে সদকায়ে জারিয়া সওয়াব দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
পরিবেশ সচেতন নবীজীর ব্যক্তিগত জীবনের উদাহরণ দেখুন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবীজী (সা.) যখন সিঙ্গা লাগাতেন বা লোম পরিষ্কার করতেন বা নখ কাঁটতেন, তখন তিনি তা জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে মাটিতে পুঁতে রাখতেন। যড়সধঁহধুঁন@ুধযড়ড়.পড়স
সম্পাদনা : সুমন ইসলাম