ট্রাম্প কি তবে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন?
অনির্বাণ বড়ুয়া : মার্কিন নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনের পক্ষ থেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অর্থ ও সম্পদের বিষয়ে নানান বিতর্ক উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এফবিআইয়ের ফাঁস করা ই-মেইলগুলোতেও এর কিছুটা প্রমাণ মিলেছে যে, হিলারি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বিদেশিদের কাছ থেকে অনুদান নিয়েছেন ও তাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। এ বিতর্কের ইতি টানতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ঘোষণা দিয়েছিলেনÑ হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন কোনো বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করবে না। ক্লিনটনদের নিয়ে এসব বহু আলোচনা হলেও ট্রাম্পের ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হয়েছে খুব কম।
সম্প্রতি নিউজউইকের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কার্ট এইকহেনওয়াল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ট্রাম্প বা তার পরিবারের অন্য সদস্য কি তবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সব সম্পর্ক চিরতরে ছিন্ন করবেন? কারণ একজন প্রেসিডেন্ট বা তার পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকাকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ভালো চোখে দেখেন না। এটি নীতিবিরুদ্ধও বটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো ক্যাম্পেইনে ট্রাম্প তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বিষয়ে বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করেছেন। এমনকী তিনি তার সম্পদের হিসাবও ঠিকমতো দেননি।
কয়েকদিন আগে লিংকড ইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হাফম্যান ট্রাম্পের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেনÑ ট্রাম্প যদি তার কর রেয়াতের (ট্যাক্স রিটার্ন) বিবরণ দেখাতে পারেন তাহলে তিনি ৫০ লাখ ডলার অনুদান দেবেন।
প্রতিবেদকের মতে, বিদেশে ট্রাম্পের এমন অনেক কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসার সম্পর্ক আছে যাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক অবৈধ ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে এমন অনেক দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সুসম্পর্ক নেই। আবার ট্রাম্পের কারণে কিছু কিছু বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে।
সৌদি আরবের প্রিন্স আলওয়ালীদ বিন তালাল যিনি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি, টুইটারের ট্রাম্পকে বিদ্রƒপ করেছেন। তুরষ্কের দোগান পরিবার যাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক তাদের মধ্যে আইদিন দোগানের বিরুদ্ধে চোরাচালানির ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাম্প পরিবারের যারা বর্তমানে বার্ষিক কোটি কোটি ডলার পেয়ে থাকেন তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছ থেকে, তাদের বিষয়ে ট্রাম্প তেমন কোনো বিবরণই দেননি। যদিও ট্রাম্প বা তার কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো প্রকারের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ নেই, তবুও ট্রাম্পের অংশীদাররা তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে সুবিধা নিতে পারেন।
কিছুদিন আগে ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং উদযাপনের দিন বলেছিলেন তিনি রাশিয়া, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনাসহ অন্যান্য দেশে ভালো সুযোগ দেখছেন। এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব সুখকর নয়।
এদিকে প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারসের পরিচালিত অডিটে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ৯০ শতাংশ টাকাই মানবতার কল্যাণে ব্যয় হয় বলে উঠে এসেছে। যদিও ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন তাদের আয়ের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যয় করে কি নাÑ এ নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে। অডিটে এও উঠে আসে যে, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ডিরেকটরের সবাই বিনা বেতনে কাজ করেন।
প্রতিবেদক প্রশ্ন রাখেন, তবে কি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পরিবারের সবাই চিরতরে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে? এফএ/ সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী