
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে পালকীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত
ফাদার নিখিল গমেজ
যীশু বলেন – “স্বয়ং পরমেশ্বর যা যুক্ত করেছেন, মানুষ যেন তা কখনো বিচ্ছিন্ন না করে” (মথি ১৯:৬)। ভালবাসার বন্ধনই পরিবারকে টিকিয়ে রাখে, আনন্দময় করে তোলে! রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি ও পালকীয় সেবাকেন্দ্রে ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ১৪তম পালকীয় কর্মশালা ২০১৬। ওই কর্মশালায় ধর্মপ্রদেশের ২১টি ধর্মপল্লীর (সাব-ধর্মপল্লীসহ), সর্বমোট ২০৩ জন অংশগ্রহণকারী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
রাজশাহীর বিশপ জের্ভাস রোজারিও তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, এ বছরের পালকীয় কর্মশালার মূলভাব নেওয়া হয়েছে “দয়াময় খ্রিস্টিয় পরিবারে ভালবাসার আনন্দ”। এ মূলভাবের মাধ্যমে পরিবারগুলোর প্রকৃত অবস্থা আমরা জানতে পারব। আমার পালকীয় পত্রে লিখেছিলামÑ ঈশ্বর শুধু নিজে নর ও নারীকে সৃষ্টি করে ও ভালবেসে তৃপ্ত থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছেন নর ও নারী যেন পরস্পরকে ভালবাসে। এখানে একজন পুরুষ একজন নারীকে ভালবেসে বিবাহ করবে এবং তাদের ভালবাসা থাকবে সৃষ্টির জন্য উন্মুক্ত, অর্থাৎ তারা সন্তান সন্তুতি জন্ম দিবে। যীশুর ভালবাসায় ভালবাসা মানে হলো ত্যাগের ও আত্মদানের ভালবাসা।
‘খ্রিস্টীয় পরিবারে দয়া ও ভালবাসার আনন্দ’ বিষয়টি নিয়ে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা সহভাগিতা করেন ফাদার দিলীপ এস কস্তা। তিনি বলেন, “ধর্মপ্রদেশের ১৪ হাজার পরিবারই যেন খ্রিস্টীয় পরিবার হয়ে উঠে এবং ঐশ দয়া ও আনন্দে পূর্ণ হয়- সেই প্রত্যাশা ও প্রার্থনা যেন হয় সকলেরই। এছাড়া তিনি যে ১০টি দিক উপস্থাপনায় গুরুত্ব দেন সেগুলো হচ্ছে”।
০১। পরিবার মানুষের আদি পরিচয় বহন করে,
০২। খ্রিস্টীয় পরিবার ও পারিবারিক জীবন,
০৩। ঐশ দয়ার প্রকাশ ও মানব জীবন,
০৪। ব্যক্তি জীবনে দয়ার উপলব্ধি,
০৫। আদর্শ পরিবার : ঐশ দয়ার প্রকাশ,
০৬। পরিবারে দয়ার আনন্দ ও জীবন সহভাগিতা,
০৭। ভালবাসা পারিবারিক জীবনের মূলমন্ত্র,
০৮। পোপ ফ্রান্সিসের পরিবারবিষয়ক চিন্তা ও প্রসঙ্গ কথা
০৯। পরিবার : পুরনো ধারণাকে নতুন করে দেখা,
১০। পারিবারিক বাস্তবতা ও আমাদের করণীয়।
‘রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বর্তমান বাস্তবতায় পরিবার ও ধর্মপল্লী পর্যায়ে দয়া, ভালবাসার অনুশীলনে সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় দিক’ বিষয় উপস্থাপনা সহভাগিতা করেন ফাদার প্যাট্রিক গমেজ। তিনি নিম্নোক্ত সমস্যা ও করণীয় দিক তুলে ধরেন।
সমস্যা :
ি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসের অভাব।
ি পরিবারে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব।
ি সমাজ পরিচালনায় যথাযথ কাঠামোর অভাব ও নিষ্কিক্রয়তা ।
ি বিয়ের আগে একসঙ্গে বসবাস (ষরাব ঃড়মবঃযবৎ) করার প্রবণতা বৃদ্ধি।
ি ধর্মীয় কাজে অনীহা।
ি মদ্যপান এবং নেশাগ্রস্ততা।
করণীয় দিক :
ি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্কের নবায়ন: পরস্পরকে স্বীকৃতি-সমর্থন দান।
ি ম্যারেজ এন্কাউন্টার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ।
ি একসাথে আহার, প্রার্থনা ও চিত্তবিনোদন।
ি রবিবাসরীয় খ্রিস্টযাগ ও অন্যান্য উপাসনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা।
ি পরিবার থেকে নেশাদ্রব্য, মাদকদ্রব্য উচ্ছেদ করা ।
ি পালকগণ কর্তৃক পরিবার পরিদর্শন করা।
ি পরিবার কল্যাণ পরিষদ বা দল গঠন করা।
ি বিধি বহির্ভুত বিবাহগুলোকে ক্যাথলিক ম-লীর বিধান অনুসরণে বৈধ করা।
এছাড়া গোটা কর্মশালায় ছিল ভিকারিয়াভিত্তিক উপস্থাপনায় আদর্শ পরিবার গঠনে সমাজ নেতার ভূমিকা, আদর্শ পরিবার গঠনে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয় সহভাগিতা এবং মূলসুর “দয়াময় খ্রিস্টীয় পরিবারে ভালবাসার আনন্দ” বিষয়ের উপর জারি গান। ভিকারিয়া ও ধর্মপল্লীভিত্তিক দলীয় আলোচনা ও পর্যালোচনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-। সব শেষে ভিকারিয়াভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা ও দেয়ালিকা প্রদর্শনের উপর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং সকলের অংশগ্রহণে প্রণয়ন করা হয় ‘প্রেরণ বিবৃতি’।
