
মাদার তেরেসাকে ‘সাধ্বী’ ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস
বিডি খ্রিস্টান নিউজ ডেস্ক
৪ সেপ্টেম্বর এক লাখের বেশি খ্রিস্টভক্ত ও অন্য ধর্মের বিশ্বাসীদের উপস্থিতিতে পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস কলকাতার মাদার তেরেজাকে সাধ্বী ঘোষণা করেছেন। ক্যাথলিক ম-লীতে মৃত ব্যক্তিদের জন্য এটি সর্বোচ্চ সন্মানীয় পদ। এটি তাঁদেরই দেওয়া হয় যাঁরা জীবিত অবস্থায় মানব কল্যাণে ও ম-লীর জন্য অসামান্য অবদান রাখেন।
পোপ ফ্রান্সিস মাদার তেরেজাকে সাধ্বী ঘোষণাকালে উপদেশ বাণীতে বলেন, “মাদার তেরেজা এমন একজন আদর্শ ছিলেন যিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন”।
পোপ মহোদয় আরও বলেন, মাদার তেরেজা ছিলেন বাইবেলের ‘লবণ’ ও ‘আলো’র মতো। তিনি তাঁর কাজ দিয়ে সেই উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন দুঃখী ও দরিদ্র মানুষের জন্য। তিনি তার সেবা কাজ দ্বারা সারা বিশ্বে স্বেচ্ছাসেবার আদর্শ রেখে গেছেন।
ভাটিক্যানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে হাজার হাজার খ্রিস্টভক্ত এবং আমন্ত্রিত অন্যান্য ধর্মের মানুষ আজ মাদার তেরেজার সাধ্বী ঘোষণার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, মাদার তেরেজা সিস্টারদের হোম থেকে যারা শিশু দত্তক নিয়েছেন এমন পিতামাতা। মাদার তেরেজার সেবার জীবন শুরু হয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায়। পোপের দফতরের আমন্ত্রণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেক মানুষ ভারত থেকে সাধ্বী ঘোষণার অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত ছিলেন।
আজ বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাথলিক চার্চগুলোতে মাদার তেরেজার সাধ্বী ঘোষণা উপলক্ষে সাধ্বী মাদার তেরেজার জীবন ফাদার-বিশপগণ আলোচনা করেন। তাঁর মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করা হয়।
১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান মাদার তেরেজা। মৃত্যুর পর তার দুটি অলৌকিক ক্ষমতার ঘটনার কথা সামনে আসে, দুজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মাদার তেরেজার নাম ধরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
আর এ দুটো ঘটনা মাদার তেরেজার সাধ্বী হওয়ার প্রক্রিয়ার এক ধাপ এগিয়ে দেয়।
ভারতের কলকাতায় মাদার তেরেজা স্থাপিত প্রতিষ্ঠান মিশনারিজ অব চ্যারিটিতেও অনুষ্ঠান হচ্ছে।
৮৭ বছর বয়সে মাদার তেরেজার মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ২০০৩ সালে সাধ্বী হওয়ার প্রক্রিয়ার একটি ধাপ ‘বিয়টিফিকেশন’-এ তাঁর নাম প্রথম প্রবেশ করে।
২০০২ সালে ভ্যাটিকান থেকে প্রথমবার মাদার তেরেজার অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানানো হয়
বলা হয়, ভারতীয় এক নারীর দীর্ঘদিনের টিউমার সারাতে যখন সব চিকিৎসকই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি মাদার তেরেজার ছবি রেখে প্রার্থনা করতে করতে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
২০১৫ সালে দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাজিলের এক বাসিন্দা জানান, ২০০৮ সালে তাঁর টিউমার সেরেছে মাদার তেরেজার জন্য। ব্রাজিলবাসী ওই রোগী অবশ্য কোনো দিন মাদারকে দেখেননি।
সংক্ষিপ্ত জীবনী :
মাদার তেরেজার জন্ম হয়েছিল আলবেনিয়ায় ১৯১০ সালের ২৫ আগস্ট জন্ম নেয়া আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিও সিস্টার হন ১৯২৮ সালে। মাদার তেরেজা ১৯৫০ সালে কলকাতায় মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে সেবা প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি গরিব, অসুস্থ, অনাথ, অসহায় ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সেই সঙ্গে মিশনারিজ অব চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও নিবিড় পরিশ্রম করেছেন।
প্রথমে ভারত ও পরে পুরো বিশ্বে তিনি তাঁর এ মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে দেন।
কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটির ১৯টি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সারাবিশ্বে প্রায় সাড়ে চার হাজার সিস্টার রয়েছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন মাদার তেরেজা।
