শিক্ষক নিয়োগে নতুন পদ্ধতি : মৌখিকের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
দেলওয়ার হোসাইন : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে মৌখিকের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষাবিদরা। তারা বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে নির্দেশনা নয়, পরামর্শ দিতে পারে সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কথা বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। তবে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা অযৌক্তিক।
গত বুধবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষক নিয়োগে মৌখিকের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষাও নিতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এছাড়া সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত অপরাধীদের নিয়োগ ঠেকাতে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) এসব নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কী আছে, সেটা আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানানো হয়নি। জানালে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। এছাড়া এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কোনো আলোচনা হয়নি।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কীভাবে দেওয়া হবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচকম-লী সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য প্রতি বিভাগে কমিটি আছে। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ দিতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন যদি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা দেখার জন্য হয় তাহলে ঠিক আছে। কারণ, আজকাল শিক্ষকদের মাঝেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষা আমার কাছে একটি অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। এটি উদ্ভট ধারণা। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যাদেরকে চাকরি দেওয়া হয় তারা সাধারণত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, লিখিত পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। এটা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার ওপর।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি চালু হলে উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো হবে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ টিপ্পনী কেটেছেন, এই পদ্ধতি চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্যও গাইড বই বের হবে কি না।
মৃন্ময় মিজান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতির যে সুপারিশ করছে ইউজিসি সেইটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবুল করলে কিন্তু ইংরেজি বিক্রয় কেন্দ্র সাইফুরসের পোয়াবারো! ওরা টপাক কৈরা একটা কোর্স চালু করে বসবে “সাইফুরস বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ ক্রাশ কোর্স”! সাথে সাথে দেখবেন নীলক্ষেতের বইয়ের বাজারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ জব গাইডের সয়লাব! শিক্ষিত বেকাররা এই সুযোগে কিছু একটা করার কথা ভাবতে পারেন বটে!
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী