ইসমাঈল হুসাইন ইমু, ভোমরা সীমান্ত থেকে ফিরে: ‘ককনো (কখনও) নৌকোয় কইরে ককনো কোমরে বা শরীরে বাইধে (বেঁধে) আবার ককনো গরুর সাথে আইসতো (আসতো) ফেনসিডিল। অস্ত্রের চালান আইসতো মাঝে মধ্যি। কদিন আগেও বিএসএফের গুলিতে রক্তে ভাইসে (ভেসে) গিছিল (গিয়েছিল) ইছামতি নদীর পানি। গরু না মানুষ মরিছে, দেকিনি। এ গিরামের (গ্রামের) সবাই জানে এ খবর।’
কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরঘেঁষা হাড়দ্দাহ গ্রামের একজন পুরনো বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘একন গেরাম অনেক ঠা-া। কেউ কিছু কল্লিকপর (বললে পরে) ধরা পইড়ে যাচ্চে। বুজতি পারিছো বাছা’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্তের এ বাসিন্দা জানান, এ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও রাতে টর্চ লাইটের আলোর ঝলকানি থাকতো গভীর রাত পর্যন্ত। টাকা-পয়সার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গোলমালও হতো মাঝেমধ্যে। নিম্ন আয়ের এই এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলত না। আবার অনেকে টাকার লোভে ওপারের লোকদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ত। গ্রামে তেমন কাজের সুযোগ নেই, তাই পেটের দায়ে এ কাজে যোগ দিত কেউ কেউ। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও জড়াতো মাদক বহনের কাজে। তবে এখন বিজিবির কড়া নজরদারি আর বিএসএফের সঙ্গে যৌথ টহলে টনক নড়েছে চোরাচালানিদের। এখন রাতে আর সরব হয় না এরা। শোনা যায় না গুলির শব্দ।
হাড়দ্দাহর পাশে চকপানিতর গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন জানান, এপার-ওপার মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ লোকের বাস। সীমান্ত এলাকার বেশিরভাগ মানুষই চোরাচালানিতে জড়িত। তবে প্রকাশ্যে কেউ কৃষি কাজ কেউ রাখাল আবার কেউ দিনমজুরের বেশে থাকে। সময় মতো চোরাকারবারিদের সঙ্গে তাদের কর্মকা- চালিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগেও হাড়দ্দাহ গ্রামের ৫ জনকে চোরাচালানের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এছাড়া প্রায়ই বিজিবি ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। বিএসএফের হাতেও ধরা পড়ে এরা। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়ে পুরনো পেশায়।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে হাড়দ্দাহ গ্রামের পাশের ইছামতি নদী থেকে চোরাচালানিরা তাদের কর্মকা- চালাতো। কিন্তু এখন তেমন একটা নেই। দু-একটি চালান এলেও তা ধরা পড়ে যাচ্ছে। বিএসএফের সঙ্গে যৌথ টহলের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। সম্পাদনা: রিকু আমির