সেই বদলে যাওয়া দেশে আপনিই হবেন হিরো
আসিফ এন্তাজ রবি
গুলশানের জঙ্গি হামলার ঘটনার পরের কথা। গুলশানে নিহত মানুষদের জানাযা অনুষ্ঠিত হলো আর্মি স্টেডিয়ামে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন আমাদের সংস্কৃতিক অঙ্গনের কিছু মানুষও। সেই জানাযা অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক নেতার একটা ছোট্ট সাক্ষাৎকার টিভিতে দেখলাম সেই সময়। তিনি যথারীতি একটা খদ্দেরের পাঞ্জাবি পরেছেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পূর্বশর্ত হচ্ছে খদ্দেরের পাঞ্জাবি। এই বস্তু ছাড়া নেতা হওয়া যায় না। বাংলাদেশের হঠাৎ গজিয়ে ওঠা আরেকগণ পাতি নেতাও প্রতিদিন নিত্যনতুন পাঞ্জাবি পরে পুরো দেশকে বিশাল কনফিউশনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। গোটা জাতির প্রশ্ন ছিল, তিনি এত পাঞ্জাবির মালিক হলেন কি করে।
যাই হোক। আমার প্রশ্ন পাঞ্জাবি নিয়ে নয়, নেতা নিয়ে। তো সেই সাক্ষাৎকারে দেখলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা মুখে পান নিয়ে অত্যন্ত হাসিমুখে জাতিকে হেদায়েত করছেন। পান চাবাতে চাবাতে কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি সাক্ষাৎকারটি দিচ্ছেন। সেখানে তিনি বললেন, বাংলাদেশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে সংস্কৃতির চর্চা হয় না। এজন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পোলাপান জঙ্গি হচ্ছে। উনি এক বুক হতাশা নিয়ে বললেন, বাংলাদেশের আবহমানকালের সংস্কৃতির চেতনার চর্চা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সবার উচিত সংস্কৃতির চর্চা করা।
উনার কথা শুনে আমি হো হো করে হেসে দিলাম। এই হচ্ছে বঙ্গদেশের সাংস্কৃতিক কর্মী। উনি ধরেই নিছেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পোলাপন উনার কাছে যাবে। গিয়ে বলবেন, আংকেল আমাকে ২ জিবি সংস্কৃতি দেন। উনি পেনড্রাইভে ‘২ জিবি সংস্কৃতি’ ‘ভরে’ দিবেন। কেউ উনার কাছে ২ গিগাবাইট সংস্কৃতি আনতে যায়নি। এজন্য পুরো দেশ পস্তাচ্ছে।
এই জাতীয় উজবুক লোক যতদিন বাংলাদেশের সংস্কৃতির ‘সোল এজেন্ট’ হয়ে বসে থাকবেন, ততদিন এই জাতির কোনো মুক্তি নেই। আপনি ভালো লিখতে পারেন? আপনার রাজনীতি করার দরকার নেই। আপনি লিখুন। দেশ বদলাবে।
আপনি তারানা হালিমের মতো প্রতিভাবান অভিনেতা? মন্ত্রী হওয়ার দরকার নেই। নাটক অঙ্গনে সময় দিন, দেশ বদলাবে।
আপনি মমতাজের মতো দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফোক শিল্পী? আপনি কেন এমপি হবেন, আপনি গান গেয়ে যান, দেশ বদলাবে।
আপনি লেখক? বাংলা একাডেমি পদক পাওয়ার জন্য সরকারের হয়ে লিখছেন? এতে আপনি পদক পাবেন, দেশ রসাতলে যাবে। আপনি আপনার অন্তর থেকে লিখুন। যা মন চায় লিখুন। দেশ বদলাবে।
দেশ যে কেবল বদলাবে তা নয়, আপনি নিজেও একজন কিংবদন্তিতে পরিণত হবেন।
কাজেই আপনার যা আছে, তাই নিয়ে দেশের জন্য ঝাপিয়ে পড়ুন। সর্বোত্তমভাবে নিজের কাজ করে যাওয়াটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম। এজন্য আপনাকে চামচামি করতে হবে না। মন দিয়ে, ভালোবেসে নিজের কাজটি ঠিকভাবে করুন। দেশ বদলাবে। সেই বদলে যাওয়া দেশে আপনিই হবেন হিরো।
এর বাইরে যা করবেন, তার পরিণতি হবে হাস্যকর। আওয়ামী লীগের কবি হইয়েন না, জামায়াতের কবি হয়েন না। আমরা বাংলাদেশের শামসুর রাহমান চাই। আমরা বাংলাদেশের আল মাহমুদ চাই। ভালো বই লিখুন। ভালো কবিতা লিখুন। ভালো সিনেমা বানান। ভালো নাটক বানান। কিছ্ইু না পারলে ভালো ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখুন। দেশ বদলাবে। আমরাই হব সেই বদলেই সৈনিক।
লেখক: সাংবাদিক ও সঞ্চালক