শেখ হাসিনার মানবিক আখ্যান
মিল্টন বিশ্বাস
পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে বিগত ২৮ বছর যাবৎ জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি। (ভূমিকা, শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১)
আমার চলার পথটি কখনোই সহজ নয়। বহু চড়াই-উতরাই পার হতে হচ্ছে। নানা সমস্যা চোখে পড়ে। দুঃখ-দারিদ্র্যক্লিষ্ট আমাদের সমাজজীবনের এই দিকগুলো সবাই চিন্তা করুক। সমাজ ও দেশ উন্নয়নের কাজে রাজনৈতিক ও মানবিক চেতনায় সবাই উজ্জীবিত হয়ে উঠুক, এটাই আমার একমাত্র আকাক্সক্ষা। (লেখকের কথা, ওরা টোকাই কেন)
৭ সেপ্টেম্বর (২০১৬) কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আর না খেয়ে মারা যাবে না, এদেশের মানুষের দুর্দিন কেটে গেছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধায় এখন কেউ আর কষ্ট পাবে না। দেশ হবে দারিদ্রমুক্ত। ওইদিন তিনি আরও বলেছেন, ‘রাজনীতি করি নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়, মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, বৃহত্তর রংপুরবাসীকে যেন আর মঙ্গা শব্দটা কানে শুনতে না হয়। আমরা এক্ষেত্রে সফল হয়েছি। কেউ আর এ অঞ্চলকে মঙ্গার এলাকা বলবে না। এ অঞ্চলে মঙ্গা হবে না, দুর্ভিক্ষ হবে না, না খেয়ে আর কেউ কষ্ট পাবে না। সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’ উল্লেখ্য, ১০ টাকা দরে চাল প্রদানের ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন তিনি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার ১০ টাকা কেজিতে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরÑ এ পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল পাবে হতদরিদ্র পরিবারগুলো।
শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকেই সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেছেন। ‘না খেয়ে আর কেউ কষ্ট পাবে না’Ñ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এই প্রতিজ্ঞা যিনি করতে পারেন তিনি কতটা মানবিক সেই বিশ্লেষণ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে করার দরকার নেই। কারণ তারা জানেন শেখ হাসিনা একজনই যিনি মানুষকে দরদ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে জানেন, সাধারণ মানুষের কষ্ট হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন। অন্যদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ টাকা কেজি চালের বিতরণ এমন সময় চালু হলো যখন ধানের মূল্যবৃদ্ধি ও বন্যার কারণে দুই দফায় চালের দাম বেড়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে কয়েক দফায় বিভিন্ন জাতের চালের বস্তায় বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ বাস্তবতার নিরিখে নিম্নবর্গ মানুষের ওপর চাপ কমানোর এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
২.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা বিশেষণে বিশেষায়িত। সততা, নিষ্ঠা, রাজনৈতিক দৃঢ়তা; গণতন্ত্র, শান্তি, সম্প্রীতি ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের অনন্য রূপকার আর মানবকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণÑ তার চেয়েও আরও আরও অনেককিছু তিনি। দরদী এই নেতা দুঃখী মানুষের আপনজন; নির্যাতিত জনগণের সহমর্মী তথা ঘরের লোক। তিনি বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত।’ শান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করতে পারেন নির্দ্বিধায়। সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু তিনি। এজন্য তার অনুপস্থিতি কারও কাম্য হতে পারে না। ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরতœ, কৃষকরতœ, জননেত্রীÑ বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাকে কেন্দ্র করে, তার নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের সবকিছু।
শেখ হাসিনা ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তার তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নৃশংসভাবে নিহত হন। একমাত্র বোন শেখ রেহানা তখন তার সঙ্গে জার্মানিতে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন এবং ১৭ মে ৬ বছর নির্বাসন শেষে দেশে ফেরেন তিনি। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পরে তাদেরও বন্দি করে রেখেছিল পাকিস্তানি আর্মি। বন্দি মুহূর্তগুলো ছিল উৎকণ্ঠায় ভরা। পিতা জীবিত আছেন জানতে পারেন স্বাধীন দেশে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু প্রথমে পরিবার নয় গিয়েছেন জনতার কাছে। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্তে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন পরিবারটির প্রেরণা। মার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল দেশ স্বাধীন হবে। মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন অনেক কিছু। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু মনে করতেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড এবং সাউথ এশিয়ার শক্তিশালী দেশ। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এ দেশ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাবনাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনাও। বাংলাদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে শেখ হাসিনা কষ্ট পান। যে মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন কষ্ট করলেন, সেই মানুষের জন্যই নিজের জীবনটাই দিয়ে গেলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এ দেশের মানুষ যে কষ্ট সেই কষ্টই পাচ্ছে। বর্তমানে তিনি চেষ্টা করেছেন মানুষের অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করতে হবেÑ এ ভাবনা শেখ হাসিনার মানবিক চেতনার অন্যতম দিক। (চলবে)
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান