নৌপথ নিরাপদ করা সময়ের দাবি
ডা. জাকির হোসেন
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এদেশের যোগাযোগের জন্য তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম খরচে যাতায়াতের একমাত্র পথ হলো নৌপথ। আমাদের স্বাধীনতা লাভের অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও নৌপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় প্রতিবছরই নৌপথে রুটিন মাফিক কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। খুব সম্প্রতি বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় অসহায়ভাবে মারা গেল প্রায় ত্রিশজনের মতো যাত্রী। ঘটনার পর জানা গেল, দুর্ঘটনাকবলিত এমএল ঐশী নামের লঞ্চটির কোনো রুট পারমিট ছিল না। এখনও পর্যন্ত প্রতিবছর যেসব নৌ দুর্ঘটনা ঘটে তাদের সবাই প্রায় একই কাহিনী। ঘটনা ঘটার পর শোনা যায়, লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল কিংবা নৌযানের ফিটনেস ছিল না অথবা যেকোনো ত্রুটির কারণে নৌযানের রুট পারমিট ছিল না। ঘটনা ঘটার পর অনেককিছু বেরিয়ে আসে কিন্তু ঘটার আগে কোনো কিছুই জানা যায় না। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। অথচ নদী পথে যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্য নির্বিঘেœ এবং নিরাপদে পরিচালনা করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় আছে, আছে নৌ অধিদপ্তর, আছে এসব ত্রুটি উদ্ঘাটনের জন্য বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক কাঠামো। এতকিছু থাকার পরও কোনোকিছুই দুর্ঘটনা ঘটার আগে জানা যায় না। সময় এসছে, এসব প্রশাসনিক কাঠামোকে নতুন করে বিন্যস্ত করার।
নদীপথে সাধারণত লঞ্চের চালক ও সহযোগিদের অবহেলা ও উদাসিনতার জন্য লঞ্চ দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। অনেক সময় অধিক যাত্রী বহন, লঞ্চের ডেকে ওভারলোড মালামাল নেওয়া, লঞ্চের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া, সার্ভে ও ফিটনেস সার্টিফিকেটে ত্রুটি এবং রাতেরবেলা লঞ্চগুলোর সার্চলাইট বন্ধ রাখার কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু জানমালের ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলোÑ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের এসব গাফিলতির কারণে দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত লোক মারা যায় অথচ এর কোনো যথাযথ তদন্ত হয় না। এসব দুর্ঘটনায় হাজারও পরিবার স্বজন হারিয়ে অসহায় হচ্ছে, তার খবর কি কেউ রাখে? তাছড়া সেকেলে যুগের আইনকানুনের ফলে আইনের ফাঁক পেরিয়ে অপরাধীরা সহজেই জামিনে বেরিয়ে আবার সেই আগের পেশায় ফিরে যাচ্ছে।
শ্রমিক ও মালিক সমিতির সংগঠনগুলোকে কোনোভাবে আইনের আওতায় আনতে গেলে তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে সাধারণ জনগণের যাতায়াতের বিঘœ সৃষ্টি করে। তাদের অন্যায় আবদারের কাছে সরকারও নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরি। লঞ্চ দুর্ঘটনায় সাধারণ নিরীহ জনগণের মৃত্যু বন্ধ করতে হলে প্রথমেই কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করা উচিত। এর পাশাপাশি নকশা অনুযায়ী লঞ্চ নির্মাণ, লঞ্চের ফিটনেস নিয়মিত তদারকি ও চালক-সহযোগিদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাসহ পুরো খাতটির ওপর বিশেষ নজরদারি করার জন্য পুরো প্রশাসনিক কাঠামো আধুনিককরণ জরুরি।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান