বালুর আগ্রাসনে বিপন্ন সুনামগঞ্জ সীমান্তের কৃষি জমি
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ : উজান থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বালুর আগ্রাসনে বিপন্ন হচ্ছে সুনামগঞ্জ সীমান্তের কৃষি জমি। সামান্য বৃষ্টিতে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঝরনা (ছড়া) দিয়ে পানির সঙ্গে নেমে আসা বালু ছড়িয়ে পড়ছে এপারের কৃষি জমিতে। দিন দিন বালুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে বালুর আস্তরণে উর্বরতা হারাচ্ছে এসব কৃষি জমি।
একসময় যেখানে ছিল আবাদি কৃষি জমি, বিশাল বিশাল পুকুর-খাল বালু পড়ে তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। একমাত্র ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে সেখানকার কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন পরিবার চালাতে দিনমজুর, বারকি শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। বালুর আগ্রাসনের শিকার জেলার প্রায় ১ হাজার ৫শ একর জমি। তবে কৃষকরা কৃষি অফিসের এ দাবি মানতে নারাজ। তাদের দাবি পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। কৃষকদের অভিযোগ- সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই কৃষি অফিসের।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা ভারত সীমান্ত ঘেঁষা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈয়ন্তিকা পাহাড়ের পাদদেশে এ পাঁচটি উপজলার কয়েক হাজার একর চাষযোগ্য কৃষি জমি রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচটি উপজেলার সীমান্তঘেঁষা প্রতিটি গ্রামের চিত্র প্রায় একই ধরনের। অধিকাংশ কৃষি জমির ওপর ৩-৪ ফুট বালুর আস্তরণের কারণে ফসল ফলানো যাচ্ছে না জমিতে। এতে কৃষক পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দশা। একমাত্র ফসলি জমি হারিয়ে দিশেহারা কৃষকদের জীবন সংগ্রাম চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা রজনীলাইন গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার, সিদ্দিক মিয়াসহ অনেকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বালু আগ্রাসনের সমস্যা বহু দিনের। তবে ২০০৫ সাল থেকে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ে ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় বিশেষ করে বর্ষাকালে বালুর সঙ্গে বড় বড় পাথরও নেমে আসে। শুধু যে কৃষি জমি তা নয়, এ আগ্রাসনের শিকার বসতবাড়ি, স্কুল, বাজার ও স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প। বালুর কারণে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এলাকা। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে আসবে এমন প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
একই গ্রামের মোকাবর হোসেন জানান, তার দু’বিঘা জমিতে প্রায় চার ফুট বালুর আস্তরণ পড়েছে। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, যে জমিতে একসময় ধান, আলু সহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজি রোপন করে সংসার চলতো এখন চাষযোগ্য না হওয়ায় তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সম্পাদনা: তারেক