স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আন্তর্জাতিক লবিয়িং করছে বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনে হবে। আর এ জন্য সরকার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ও বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আগামী বছরের শুরুতে শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে নতুন কমিশন নিয়োগ করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। বিএনপির অভিযোগÑ সরকার তাদের পছন্দের মানুষদেরকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করার জন্যই সার্চ কমিটি করে মনের মতো কমিশন করবে আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একটি নির্বাচন করবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল করতে দেওয়া হবে না। এজন্য তারা ইতোমধ্যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করেছে। জনগণের মতামত নিয়ে কমিশন গঠন করার কথাও বলেছে। কিন্তু সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমেই কমিশন গঠন করতে চায়। আর বিএনপি এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি মাঠের নেতাদের সক্রিয় করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যারা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠুু নির্বাচনের কথা বলে আসছেন সেসব দেশের কাছে লবিয়িং শুরু করেছেন। এরইমধ্যে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন ইস্যু নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। সেখানেও বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেন নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে করা হয় সেজন্য আন্তর্জাতিক মহল দিয়ে সরকারের ওপর চাপ দিতে চাইছে।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কূটনীতিকদের ও বিভিন্ন দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছেÑ তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন। এ ছাড়াও তার দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা, হয়রানি, এবং তাদের নামেও যেসব মামলা হচ্ছে এই সব ব্যাপারেও সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। দেশে অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বহাল রয়েছে বলেও জানিয়েছেন। এই যুক্তি তুলে ধরে খালেদা জিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এই সরকারের অধীনে ও তাদের গঠন করা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়। এই ইস্যুটাকে এখন তারা কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরছেন। নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসবে তা আরো বাড়াবেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোনো ভুল করতে চাইছে না। এ জন্য আগে থেকেই এই ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচনের জন্য করণীয় ও কীভাবে তার দল সরকারের সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবেÑ সেই চেষ্টা করছেন। তাদেরকে মাইনাস করার যে চেষ্টা চলছে তা-ও জানিয়েছেন।
সূত্র আরো জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছেও খালেদা জিয়া আগাম নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয় এবং শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এখন অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় বলে জঙ্গিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলার জন্য এখন ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এবং অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। আর সরকার যাতে সার্চ কমিটি গঠন করে নিজেদের মনের মতো ব্যক্তিকে কমিশনের দায়িত্ব দিতে না পারে ও আগামীতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কোনো নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য লবিয়িং শুরু করেছে।
পাশাপাশি বিএনপি জনগণকেও সচেতন করতে চাইছে। নির্বাচন কমিশন ছাড়াও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে লবিয়িং করছে। সরকার যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশের ক্ষতি হবে ও ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সৌন্দর্য নষ্ট হবে এমন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেবে না। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে মৈত্রী সুপার পাওয়ার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে সুন্দরবনের কাছে, রামপালে।
সরকার দাবি করছে, সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি না করেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। সম্প্রতি ইউনেস্কো উদ্বেগ জানিয়ে এ প্রকল্প বাতিল করার আহ্বান জানায়। সরকারকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে। সেই ইস্যুটাকে বিএনপি কাজে লাগাতে চাইছে। পাশাপাশি তারা এই ব্যাপারে অন্যদের জানাতে চাইছে। বিএনপির তরফ থেকে ইউনেস্কোর কাছেও চিঠি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এদিকে সরকারও ইউনেস্কোকে চিঠি দিচ্ছে রামপালের পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরে।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, সরকার এই কেন্দ্র করার পক্ষে যতই যুক্তি দিক না কেন এটা করতে দেওয়া হবে না।
সূত্র জানায়, এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আলোচনা করেছেন। তারা এই ব্যাপারে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনা তৈরির জন্য নেতাদের আরো সক্রিয় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।