বিশ্ব হার্ট দিবস আজ শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নতি খুবই কম
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রেজওয়ানা রিমা
রিকু আমির: প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদরোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশ যেমন উন্নতি করেছে তেমন উন্নতি নেই শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায়। শিশু হৃদরোগের চিকিৎসক, চিকিৎসা কেন্দ্রের ঘাটতির পাশাপাশি এ বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগও অত্যন্ত কম। ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানা রিমা রোববার আমাদের অর্থনীতিকে দেয়ীা একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
আজ ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেজওয়ানা রিমা বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক হৃদরোগীর চিকিৎসায় দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু শিশুদের জন্য খুবই কম। ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু হৃদরোগীর অপারেশনও আবার সব জায়গায় হয় না। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত সার্জন, যন্ত্রপাতি- সব কিছুরই অভাব রয়েছে অনেক। বেসরকারিখাতেও শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব একটা দেখা যায় না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক রেজওয়ানা রিমা বলেন, ঢাকা শহরে শিশু হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অল্প হলেও চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমন নেই চিকিৎসক, যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, শিশুদের হৃদরোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা জন্মগতভাবে হৃদপি-ে সমস্যা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। কোনো শিশুর হৃদপি-ে ছোট বা বড় ছিদ্র থাকে, হৃদপি-ের রক্তনালীতে সমস্যা থাকে। এসবের আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। ধারণা করা হয়, গর্ভধারণের তিন মাসের মধ্যে মা যদি রুবেলায় আক্রান্ত হন, ডায়াবেটিকস, থাইরয়েডে আক্রান্ত থাকেন, তবে গর্ভের শিশু জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভূমিষ্ঠ হতে পারে। আরও অনেক কারণ রয়েছে। বর্তমানে অভিজাত পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা স্থূলকায়। শিশু বয়সে তারা হৃদরোগে খুব একটা আক্রান্ত না হলেও তারা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জনকারী ও ভারতের মাদ্রাজ ও হায়দারাবাদ থেকে শিশু হৃদরোগের উপর উচ্চতর পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী এই শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে হলে দেশে পড়াশোনার বিষয়টির দিকে জোর নজর দেয়া উচিৎ। সবার পক্ষে সম্ভব হয় না, বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বা উচ্চতর পড়াশোনার। এতে অনেকের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বে¡ও শিশু হৃদরোগ বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন না। বর্তমান বাংলাদেশে শিশু হৃদরোগের উপর পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা-ও এখান থেকে এখন পর্যন্ত কেউ বের হননি। দুজন খুব শিগগিরই পাস করে বের হতে যাচ্ছেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে কার্ডিয়াক সার্জারির উপর পড়াশোনার সুযোগ আছে সীমিত পরিসরে। মাত্র একজন সার্জন বেরিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি থেকে। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ বিষয়ে যিনি পড়বেন তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল, চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা সম্পন্ন হতেই হবে।
দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ শিশু হৃদরোগী পাওয়া যায়- প্রশ্নের উত্তরে ডা. রেজওয়ানা রিমা বলেন, আসলে আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান নেই। অথচ শিশু হৃদরোগ মোকাবিলা করতে হলে পরিসংখ্যান খুবই জরুরি। শিশু হৃদরোগ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গবেষণারও অভাব আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডা. রেজওয়ানা রিমা বলেন, শিশু হৃদরোগ সম্পর্কে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি আছে যথেষ্ট। বিশেষ করে নিরক্ষরদের মধ্যে এটি লক্ষণীয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় চিকিৎসকও উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেন না। তবে হৃদরোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সময় মত ও উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম